উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজশাহীতে থেমে নেই কৃষিজমিতে পুকুর খনন। এতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানও চালানো হচ্ছে। দিনে অভিযান চালিয়ে যে পুকুর খনন বন্ধ করা হচ্ছে, রাতেই আবার সেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফলে গত পাঁচ বছরে জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে ১৫ হাজার হেক্টর। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে- জেলায় মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩১ হেক্টর। আবাদযোগ্য জমির ১ শতাংশও পতিত নেই। ২০০৭-০৮ সালেও জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ হেক্টর। ২০১২-১৩ মেয়াদে তা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৮১০ হেক্টর। এখন জেলায় আবাদযোগ্য জমি আছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৮ হেক্টর। গত এক দশকে আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৩ হাজার হেক্টরের বেশি। এর বড় অংশ চলে গেছে বাণিজ্যিক পুকুর খননে। পুকুর খননের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আদালতের শরণাপন্ন হলে বাগমারা, পবা, গোদাগাড়ী, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপরও থেমে নেই খননকাজ। দু-এক উপজেলায় প্রশাসন পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও লাভ হচ্ছে না। যে এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে, সেখানে রাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। যেখানে অভিযান চালাচ্ছে না, সেখানে দিনের বেলায় চলছে পুকুর খনন। পবার বড়গাছি এলাকার বাসিন্দারা জানান, এ উপজেলায় সংস্কারের নামে চলছে পুকুর খনন। একই অবস্থা জেলার অন্য উপজেলাগুলোরও। তানোরের চান্দুড়িয়া এলাকার বিলের সিংহভাগ জমি এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে। রাজশাহী কৃষি বিভাগ বলছে, কয়েক বছর ধরে গোদাগাড়ী, পবা, তানোর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, মোহনপুর, বাঘা ও চারঘাট এলাকায় ফসলি জমিতে পুকুর-দিঘি খননের হিড়িক পড়েছে। প্রতি বছরই ছোট-বড় ১ হাজার পুকুর কাটা হচ্ছে। গত ৯ বছরে নতুন পুকুর কাটা হয়েছে ৫ হাজার। এসব পুকুরের কারণে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া শত শত ইটভাটা নষ্ট করেছে আরও ৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমি। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামশুল হক বলেন, বেশির ভাগ পুকুর কাটা হয়েছে নিষ্কাশন নালা, জলাধারের সেতু-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে। ফলে বৃষ্টি হলেই পুকুর-দিঘি সংলগ্ন জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গবাদিপশুর বিচরণভূমিও।
কৃষি বিভাগ থেকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও কাজে আসেনি।