বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মহারাজা স্কুল মাইন ট্র্যাজেডি দিবস আজ

দিনাজপুর প্রতিনিধি

স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পরবর্তী এক বেদনাবিধুর মাইন বিস্ফোরণ ট্র্যাজেডি দিবস আজ। স্বাধীনতা অর্জনের কয়েকদিন পর ১৯৭২-এর এই দিনে দিনাজপুরে এক মাইন বিস্ফোরণে শহীদ হন পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার। দিবসটি পালন উপলক্ষে ৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। দিবসটি পালনের লক্ষ্যে ৬ জানুয়ারি ‘স্মৃতি পরিষদ, দিনাজপুর’ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, চেহেলগাজী মাজারে শহীদদের গণকবর ও মহারাজা স্কুল প্রাঙ্গণে শহীদদের নামফলকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রুটিন ওয়ার্কের এক পর্যায়ে ঘটে যায় মাইন বিস্ফোরণ দুর্ঘটনা। এতে শহীদ হন ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।  প্রতি বছর দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। দুর্ঘটনার পরদিন দিনাজপুর গোরা শহীদ ময়দানে শহীদদের নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

পরে সামরিক মর্যাদায় ১২৫ জন শহীদের লাশ দাফন করা হয় পুণ্যভূমি ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে।

এবং স্কুলে একটি ট্রানজিট ক্যাম্প বসানো হয়। ৬ ও ৭ নম্বর সেক্টরের প্রায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখানে অবস্থান  নেন। ভারতের হরিরাম, হামজাপুর, তরফপুর এবং বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, হাকিমপুর, বিরামপুর, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, ঠাকুরগাঁও হরিপুর, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গা ও রানীশংকৈল এলাকার যোদ্ধারা ১৬ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে মহারাজা স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান নেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের মাটিতে দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন এবং ফেলে যাওয়া ও লুকিয়ে রাখা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রতিদিন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তল্লাশি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রাকে করে পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র মহারাজা স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পের রক্ষণাগারে জমা করতেন। ঘটনার দিন ঘোড়াঘাট থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ বোঝাই দুটি ট্র্রাক আসে বিকাল ৪টায়। শুরু হয় ট্রাক থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের কাজ। সোয়া ৫টার সময় প্রথম ট্রাকের অস্ত্র নামানোর কাজ শেষ হয়। তারপর শুরু হয় দ্বিতীয় ট্রাকটির অস্ত্র নামানোর কাজ। ট্রাক থেকে বাঙ্কারে অস্ত্র নামানোর সময় একজনের হাত থেকে অসাবধানতাবশত কয়েকটি পারসোনাল মাইন মাটিতে পড়ে গেলে মারাত্মক ও হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। মুহূর্তের মধ্যে বাঙ্কারে মজুদকৃত বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।  প্রায় ১৫ থেকে ২৫ ফুট গভীর বিরাট বাঙ্কারটির আশপাশ ফাঁকা জায়গাটি পুকুরে পরিণত হয়। দুর্ঘটনার সময় অদূরে টিনের ছাপরার মসজিদে মাগরিবের সামাজ আদায়কারী সব মুসল্লি ও দুর্ঘটনা থেকে ১৫০ গজ অদূরে মহারাজা স্কুলের ১৩টি কক্ষে অবস্থানরত অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তৎকালীন মহারাজার আমলে নির্মিত এই স্কুল ভবন মাইন বিস্ফোরণে দুমড়ে-মুচড়ে কাগজের মতো হয়ে যায়। ভয়াবহ এ মাইন বিস্ফোরণে কতজনের নির্মম মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা আজও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নয়, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় উত্তর বালুবাড়ী কুমার পাড়া এলাকার আরও ১৫ জন অমুক্তিযোদ্ধাও মৃত্যুবরণ করেন। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় মহারাজা স্কুলের দ্বিতল ভবনসহ আশপাশের অধিকাংশ ঘর-বাড়ি, দালানকোঠা।  দুর্ঘটনার পরদিন ৭ জানুয়ারি দিনাজপুর গোরা শহীদ ময়দানে শহীদদের নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সামরিক মর্যাদায় ১২৫ জন শহীদের লাশ দাফন করা হয় পুণ্যভূমি ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে। এরপর চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে আরও দাফন করা হয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করা ২৯ জনের লাশ। নিহতদের মধ্যে সে সময় ৫৮ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে পাওয়া যায় আর ৬৪ জন শহীদের নাম ও পরিচয়।

সর্বশেষ খবর