শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শেরপুরে ‘এর’ জমিকে ‘ওর’ বানিয়ে দিচ্ছে জালিয়াতরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার শেরপুরে সাবরেজিস্ট্রি অফিসকে ব্যবহার করে জালিয়াতচক্র ‘এর’ জমিকে ‘ওর’ জমি বানিয়ে দিচ্ছে। মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে জমি নিবন্ধনও করছে। ফলে বেশ রমরমা হয়ে উঠেছে এ বাণিজ্য। অফিসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলিল লেখকদের একটি অংশ জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তারাই ভুয়া নামজারি, ডিসিআর, খাজনার রশিদ, আরএস রেকর্ডের জাল কাগজ তৈরি করে জমি নিবন্ধন করছে। সাবরেজিস্ট্রারের চোখ ফাঁকি দিতে দুর্বৃত্তরা যেসব কৌশল প্রয়োগ করছে সে বিষয়ে নানা কাহিনি শোনা যায়। এ রকমই এক কাহিনির মূলে আছেন অজুফা নামে এক নারী। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী উপজেলার গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী অজুফা খাতুন শেরপুর পৌর শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ২৭ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে বসেন। নানা ও চাচার সম্পত্তির ওয়ারিশ হিসেবে একটি দানপত্র দলিল বানানোর উদ্দেশ্যে তিনি চক্রটির সঙ্গে চুক্তি করেন। অভিযোগ উঠেছে, ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এ দলিল নিবন্ধন করার দায়িত্ব নেন তারা। সে অনুযায়ী সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর দলিলটি নিবন্ধনের জন্য সাবরেজিস্ট্রারের সামনে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তিনি কাগজপত্রে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি ধরতে পারায় দলিলে স্বাক্ষর দেননি। ভুক্তভোগী আপেল মাহমুদ আশকারীর অভিযোগ, এর পরও জালিয়াত চক্রটি থেমে নেই। তাদের মালিকানাধীন কোটি টাকা মূল্যের জমির জাল দলিল তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে চক্রটি। তিনি জমি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পাদন আইন, ১৮৮২-এর ৫৩সি ধারা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে কোনোভাবে প্রাপ্ত জমির নামজারি খতিয়ান না থাকলে সে জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা রয়েছে।

অজুফা খাতুনের নামে কোনো নামজারি, ডিসিআর ও খাজনার রশিদ নেই। সব আমাদের নামে। ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্রই তার প্রমাণ। কিন্তু তিনি জমির মালিক সেজে জমি নিবন্ধন করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।’

তবে অজুফা খাতুন বলেন, ‘ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিক আমি। তাই ক্রেতাদের কাছে জমি নিবন্ধন করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি।’ এদিকে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায, শেরপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া।

এদিকে শেরপুর দলিল লেখক সমিতির উপদেষ্টা আবদুল মতিন বলেন, ‘দু-এক জনের ব্যাপারে অভিযোগ থাকতে পারে। তবে দলিল লেখকরা মোটামুটি সবাই ভালো। এ ছাড়া কাগজপত্র ছাড়াই জাল দলিল তৈরির জন্য নিবন্ধনের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। বিষয়টি সব দলিল লেখকই জানেন। এ জন্য আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি।’

শেরপুরের সাবরেজিস্ট্রার নুর-এ আলম বলেন, ‘নিবন্ধনের সময় কাগজপত্রে ত্রুটি ধরা পড়ায় দলিলটি বাতিল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ তিনি জানান, তিনি এখানে সদ্য যোগদান করেছেন। সবকিছু বুঝে উঠতে একটু সময় লাগছে। তবে কোনো ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে কাউকে জমি নিবন্ধন করে নিতে দেওয়া হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর