ইজারার শর্ত না মেনে নদী চরের পরিবর্তে তীরবর্তী সমতল ভূমি খুঁড়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি নদী ভোগাই। সংকটে পড়ছে নাব্যতা। ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি। প্রকাশ্যে এ ধ্বংসলীলা চলছে প্রতিকারে স্থায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যতীত নদী রক্ষায় বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। জানা গেছে, এক বছরের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় ভোগাই নদীর মন্ডলিয়াপাড়া, কেরেঙ্গাপাড়া, ফুলপুর ও আন্দারুপাড়া এ চারটি মৌজায় ১২.৩২ একর নদীর চর বালু মহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয় ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। এরপর থেকে শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইজরার শর্ত ভঙ্গ করে অনেকটা উন্মুক্ত হয়ে যায় ভোগাই নদী। ফলে যত্রতত্র বোরিং, নিষিদ্ধ এলাকায় ড্রেজিং এমনকি নদী তীরবর্তী সমতলের পরিত্যক্ত ভিটেমাটি, আবাদী ও অনাবাদী জমি খুঁড়ে গভীর বোরিং করে চলছে ভূ-গর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন। এতে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বদলে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে খরস্রোতা ভোগাই। ভাঙছে নদীর তীর। বাড়ছে পাহাড়ি ঢলে বন্যার ঝুঁকি। অন্যদিকে এসব বালু পরিবহনে অতিরিক্ত লোড করায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ ও ইউনিয়ন সড়কগুলো। এলজিইডি’র নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব রাস্তা তৈরিতে প্রতি কিলোমিটারে সরকারের ব্যয় যেখানে প্রায় কোটি টাকা। সেখানে বর্তমানে প্রায় ৫০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক ভোগাই ও চেল্লাখালীর বালুতে নষ্ট হয়ে গেছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এসব রাস্তা রক্ষায় ১০ টনের অধিক ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাইনবোর্ড দিলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় মানছে না কেউই। উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমাদের আওতায় উপজেলায় সর্বমোট ৭০২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বর্তমানে পাকা রয়েছে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার।
এরমধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক শুধুমাত্র বালু পরিবহনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এসব রাস্তায় ১০ টনের অধিক ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা করে সাইনবোর্ড লাগিয়েও ওভার লোড বন্ধ করতে পারছি না। ইউএনও মাহ্ফুজুল আলম মাসুম জানান, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে বালু উত্তোলন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব এবং ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
