রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বাড়ছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিধি

সুবিধা পাবে ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমি, ব্যয় হবে ১৫০০ কোটি টাকা

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

বাড়ছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিধি

তিস্তা ব্যারাজের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাড়ছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিধি। জনস্বার্থে এমন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরের চার জেলার ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। এদিকে গত শুক্রবার বিকাল থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্ট থেকে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক সেচ কার্যক্রম। বর্তমানে তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমন মৌসুমেও সম্পূরক সেচ সুবিধা দেওয়া হয় সাড়ে ৩ হাজার কিউসেক পানি দিয়ে। ১৩টি উপজেলা সেচ সুবিধার আওতায় আসায় বছরে গড়ে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ১১ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কৃষির পাশাপাশি মৎস্য খাতের প্রসার ঘটবে। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে বছরে উৎপাদন করা যাবে অতিরিক্ত ১ হাজার কোটি টাকার খাদ্যশস্য। এ ছাড়া আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৩০ লাখ মানুষের। সম্প্রতি পুরনো সেচ খাল সংস্কারে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের আওতায় এখানে রয়েছে ছোট-বড় মিলে ৭০০-এর বেশি খাল। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে পলি জমে ভরাট হওয়া খাল সংস্কার, বাঁধ-স্লুইসগেট মেরামতসহ আনুষঙ্গিক কাজ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেচের আওতায় আসবে ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি। বছরে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ধান ও সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। সেচ সুবিধাভোগী লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি ইউনিয়নের আশরাফ আলী জানান, পানি পেতে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন তারা। এ কারণে গত বছর থেকে ফলনও ভালো হচ্ছে। একই ইউনিয়নের চর গড্ডিমারির কৃষক মনির হোসেন জানান, তার ৩০ শতক জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে খরচ হতো ২ হাজার টাকা। এখন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ রায় জানান, বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে ধানের উৎপাদন হয় বেশি। এখানকার কৃষকরা যেন নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা পান সে জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা অতিরিক্ত ১ হাজার কোটি টাকার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। জমিতে সেচ দেওয়ার কারণে লালমনিরহাট, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির উচ্চতাও বেড়েছে। তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে সেচ কাঠামোসহ প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ নেটওয়ার্ক প্রস্তুত রয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হলে আরও ৪ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর