মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বন্ধ চিনিকল, গুড় তৈরি করে বেঁচে থাকার যুদ্ধ

নজরুল মৃধা, রংপুর

বন্ধ চিনিকল, গুড় তৈরি করে বেঁচে থাকার যুদ্ধ

রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মিলজোন এলাকার আখ পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট চিনিকলে বিক্রি করতে হবে। সেখানে কবে নাগাদ অর্থ পাওয়া যাবে এ নিয়ে রয়েছে চাষিদের মাঝে অনিশ্চয়তা। তাই আখচাষি ও একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা পাওয়ার ক্রাশার মেশিন দিয়ে আখ মাড়াই করে গুড় তৈরি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন, এভাবে আখ থেকে গুড় তৈরি করা বেআইনি। তার পরেও দিন রাতে সমানতালে চলছে গুড় তৈরির কাজ। জানা গেছে, চিনিকল বন্ধের সুযোগে রংপুর অঞ্চলে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক গুড় মাড়াইকল।  ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে আখ কিনে ক্রাশার মেশিনে মাড়াই করে গুড় তৈরি করছেন। আবার কোনো কোনো কৃষক নিজেই মেশিন কিনে গুড় উৎপাদন করছেন। প্রথমে মাড়াই মেশিন দিয়ে আখ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। সেই রস বড় চুল্লিতে কড়াইয়ে বসিয়ে জাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। বদরগঞ্জের আউলিয়াগঞ্জ, কুতুবপুর ও পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসুমপুরসহ  যমুনেশ্বরী নদীর চরে মাড়াই মেশিন দিয়ে চলছে এই গুড় তৈরির কাজ। মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসিমপুর এলাকার আবদুর রহমান জানান, সুগারমিল বন্ধ,  সেই জন্য আখ থেকে গুড় মাড়াই করছি। প্রতি কেজি গুড় পাইকারি ৭০ টাকায় বিক্রি করছি। তিনি মনে করেন, আরও তিন মাস আখ মাড়াই করে গুড় তৈরি করতে পারবেন। একই উপজেলার পলিপাড়া গ্রামের রহিম উদ্দিন বলেন, নিজের জমির আখ। মিল বন্ধ তাই মেশিনে কুশার (আখ) মাড়াই করছি। ৮০০ কেজি আখে ৫৬ কেজি গুড় হয়। দিনে কমপক্ষে ৬ মণ গুড় তৈরি করা যায় বলে তিনি জানান। যমুনেশ্বরী নদীর তীরে মাড়াইকারী জয়নাল আবেদীন জানান, আখগুলো তার নিজের জমির।

তাই ক্রাশার মেশিন দিয়ে আখ মাড়াই করে গুড় তৈরি করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। শ্যামপুর এলাকার চাষি সামছুজ্জামান জানান, তিনি ২ একর জমিতে আখ আবাদ করেছেন। আখ জয়পুরহাটে বিক্রি করতে বলেছেন। সেখানে কবে নাগাদ টাকা পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আখের আয়ুষ্কাল ১৪ মাস হলেও বর্তমানের আখের বয়স ১৬ মাস হয়ে গেছে। তাই পেটের দায়ে অনেকের মতো তিনিও গুড় তৈরি করছেন। কিন্তু গুড়ের যে দাম তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। টিকে থাকার জন্য আমরা এটা করছি। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের নির্দেশে রংপুরের বদরগঞ্জের শ্যামপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়,  রংপুর (মহিমাগঞ্জ) ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদিত আখ জয়পুরহাট চিনিকলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে ২ জানুয়ারি মিলগেটে আখ নেওয়া শুরু হয়। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার ২০০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। চিনিকলের আওতায় ৬৫ ইউনিটে আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। শ্যামপুর সুগারমিল অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বুলু আমীন বলেন, মিল বন্ধ হওয়ায় অনেক চাষি জয়পুরহাটে আখ দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এ কারণে অনেকেই মাড়াইকলে আখ বিক্রি করে দিচ্ছে। শ্যামপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দীলিপ কুমার সরকার জানান, শ্যামপুরের উৎপাদিত আখ জয়পুরহাট চিনিকলে যাচ্ছে। তবে পরিমাণে কম। চাষিরা আখ থেকে গুড় উৎপাদন করছেন। এমন কাজ বেআইনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর