শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শত্রুতায় পুড়ল বীজতলা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

শত্রুতায় পুড়ল বীজতলা

কীটনাশকে পুড়ে যাওয়া ১৬ কৃষকের বীজতলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নওগাঁর পোরশায় অতিরিক্ত পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করে প্রায় ছয় বিঘা জমির বোরো ধানের বীজতলার চারা ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পূর্ব শত্রুতায় উপজেলার পাশাপাশি তিনটি মাঠে কীটনাশক প্রয়োগ করে ১৬ কৃষকের বীজতলার চারা ঝলসে দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। ধান রোপণের আগ মুহূর্তে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশাহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তারা বলছেন, ছয় বিঘা জমিতে তাঁরা ৩০ মণের বেশি ধানের বীজ বপন করেছিলেন। প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের লক্ষ্য ছিল তাঁদের। পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা গত মঙ্গলবার উপজেলার সুতলী গ্রামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘাটনগর ইউনিয়নের দেউপুরা, সুতলী ও দেউপুরা মাঠে দেউপুরা, সুতলী, ধামানপুর ও সোমনগর গ্রামের ১৬ কৃষক বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেন। প্রায় দেড় মাস আগে ছয় বিঘা জমিতে ওই ১৬ কৃষক বোরো ধানের বীজ বপন করেন। ১০-১৫ দিন পরে তাঁদের বীজতলার চারাগুলো জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়ে উঠত। এ অবস্থায় গতকাল রাতের কোনো এক সময় সুতলী গ্রামের একটি মহল তাঁদের বীজতলায় অতিরিক্ত পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করে চারা গাছগুলো ঝলসে দেয়। প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলার মালিক মনিব আল রাজী, এনামুল হক শাহ, মোস্তাফিজুর রহমান, হারুনুর রশিদ ও আনারুল হকের সোমনগর ও ধামানপুর মাঠে ১৫ বিঘা আবাদি জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। এর আগেও জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তিনি প্রতিপক্ষের পুকুরের মাছ ও আম বাগানের ক্ষতি করেছে। এবারও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধারণা, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ওয়াসিম মন্ডল কীটনাশক প্রয়োগ করে তাঁদের বীজতলা নষ্ট করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দেউপুরা গ্রামের মনিব আল রাজী বলেন, আর দিন পনেরো পরেই চারাগুলো জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়ে উঠত। গত মঙ্গলবার সকালে কৃষকেরা বীজতলায় গিয়ে লক্ষ্য করেন তাঁদের চারাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে ও শুকিয়ে গেছে। কৃষকেরা প্রথমে মনে করেন কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীতের কারণে হয়তো চারাগুলো হলুদ হয়ে যাচ্ছে। চারা বাঁচানোর জন্য বীজতলার আগের পানি বের করে দেন এবং বৈদ্যুতিক মর্টার ও শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বীজতলায় নতুন পানি দেয়। কিন্তু তারপরেও তাঁরা লক্ষ্য করেন বীজতলার চারাগুলো ধীরে ধীরে আরও বেশি হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তাঁদের ধারণা, জমির আগাছা মারার কীটনাশক প্রয়োগ করে তাঁদের চারাগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ধামানপুর গ্রামের ধীরু উড়াও বলেন, গত চার বছর ধরে চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তিনি বোরো ও আমন ধান আবাদ করছেন। এ বছরেও বর্গা নেওয়া জমিতে ধান চাষের জন্য সোমনগর মাঠে ১০ কাঠা জমিতে আধা মণ ধান বপন করে বীজতলা তৈরি করেন। পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বীজতলার চারা দেখে মনে হয়েছে বীজতলায় অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে চারাগুলো নষ্ট করা হয়েছে। পোরশা থানার ওসি শফিউল আজম খান বলেন, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর