সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

দুর্গম পদ্মা চরে আড়াই শ কোটি টাকার রবিশস্য

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

দুর্গম পদ্মা চরে আড়াই শ কোটি টাকার রবিশস্য

কুষ্টিয়ার দুর্গম পদ্মার চরে উৎপন্ন হয়েছে আড়াই শ কোটি টাকার রবিশস্য। প্রায় দুই যুগ আগে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর আর চিলমারী ইউনিয়ন। পরে সেখানে চর জেগে উঠলেও কোনো কাজে আসত না সাধারণ মানুষের। তবে কয়েক বছর ধরে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ বিস্তীর্ণ পদ্মা চরে শুরু হয়েছে নানা ফসলের আবাদ। এবারের রবি মৌসুমে আড়াই শ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এতে নতুন করে আশার আলো দেখছেন চরের হাজার হাজার মানুষ। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ জনপদের যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ দৃশ্যপট। মনে হয় কেউ নিপুণ হাতে দিগন্তজুড়ে সবুজের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। বর্তমান সময়ে দুর্গম এই পদ্মা চরে এমনই সবুজ ফসলের হাসি ফুটেছে। রবিশস্যের মধ্যে গম, মসুর, ছোলা, ভুট্টা, মটর খেসারিসহ নানা ধরনের ফসলে ছেয়ে গেছে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর আর চিলমারী ইউনিয়নের চরের জমি। প্রায় তিন যুগ আগে এ দুটি ইউনিয়ন পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন এই দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। অনেকে কৃষক থেকে হঠাৎ করে ভিখারি বনে যান। পরে নদীতে ধীরে ধীরে চর জেগে ওঠে। প্রথম দিকে এ বালুচর কৃষকদের কোনো কাজে আসেনি। গত কয়েক বছরে বর্ষায় পলি পড়ে এই চরের জমি আবাদযোগ্য হয়ে উঠেছে। কৃষি বিভাগের তথ্যে জানা যায়, দুই ইউনিয়নের চরে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমি আবাদের আওতায় এসেছে। চলতি রবি মৌসুমে এই পদ্মা চরে ১৫১৫ হেক্টর জমিতে মসুর, ১৪৬০ হেক্টর জমিতে গম, ৮৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৬০০ হেক্টর জমিতে খেসারি, ১০০০ হেক্টর জমিতে মুড়ি কাটা পিঁয়াজ ও ৬০ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এবার চরের জমিতে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার রসুন, ৬৭ কোটি টাকার পিঁয়াজ, ২২ কোটি টাকার মসুর, ১৩ কোটি টাকার গম, ১০ কোটি টাকার ভুট্টা ও ৭ কোটি টাকার খেসারি উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া রবি মৌসুমে উৎপাদিত অন্যান্য ফসল থেকে আসবে আরও ৫০ কোটি টাকা।

চরের সব জমি আবাদের আওতায় এলে আরও বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা স্থানীয়দের। এদিকে, পদ্মা চরে আবাদ শুরু হওয়ায় নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলো আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ১৯৯০ সালের পর পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এরপর টানা চার বছরের নদী ভাঙনে তিনি একে একে সব আবাদি জমি থেকে শুরু করে বসতবাড়িও হারান। চার বছরের মাথায় এসে তিনি সমৃদ্ধ কৃষক থেকে পথের ভিখারি বনে যান। বর্তমানে তার সব জমি আবার জেগে উঠেছে। শুরু হয়েছে নানা ফসলের আবাদ। আবার তার পরিবারে হাসি ফুটেছে। একই ইউনিয়নের রায় ভাগজোত গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, এবারের মৌসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে মুড়ি কাটা পিঁয়াজ ও চার বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে খেত থেকে পিঁয়াজ তুলে বিক্রি শেষ হয়েছে। তিনি প্রায় ২৪০ মণ পিঁয়াজ পেয়েছেন। এসব পিঁয়াজ ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের লাভের মুখ দেখেছেন। এদিকে সম্প্রতি এ চরের মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। বিদ্যুৎ দিয়ে স্বল্প খরচে সেচ যন্ত্র চালিয়ে সারা বছর আরও নানান জাতের ফসল ফলাতে পারবেন বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ। সরকার তথা কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে চরের সব জমি আবাদের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষকরা। তারা সহজ শর্তে ঋণ পেতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও কামনা করেন। দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, চরের কৃষকদের সরকারি প্রণোদনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। চরের সব জমি আবাদের আওতায় আনার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ ছাড়া কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর