সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

রংপুরে মাছের ঘাটতি ৯০ হাজার মেট্রিক টন

নজরুল মৃধা, রংপুর

রংপুরে মাছের ঘাটতি ৯০ হাজার মেট্রিক টন

মাছ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পন্ন হলেও রংপুর বিভাগে প্রতিবছর মাছের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন। ফলে আমিষের সংকটে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে নদী, নালা, খাল, বিলে পানি না থাকায় মাছের এ ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন মৎস্য বিভাগ। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে এই খাতকে যান্ত্রিকীকরণ করা হলে দ্রুত এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব। রংপুর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় দেড় কোটির ওপর মানুষের বসবাস। শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক মিলে একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিন মাছের চাহিদা ৬০ গ্রাম। সেই হিসাবে একজন মানুষের প্রতিবছর মাছের চাহিদা প্রায় ২২ কেজি। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী মাছ খেতে পারছেন না এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। ফলে সারা বছরই মাছের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। প্রতিবছর এ অঞ্চলের মাছের চাহিদা ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন।

সেই হিসেবে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৯০ হাজার মেট্রিক টন।  সূত্র মতে রংপুর বিভাগে অর্ধশত নদী, খাল প্রায় ৪ লাখ হেক্টর, ৮৩৭টি বিলে ৪০ হাজার ২৮৮ হেক্টর, ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭০২টি পুকুরে ১২ হাজার ২৬৯ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হয়। এ ছাড়া বর্ষাকালে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হয়। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের সৃষ্টি পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় জলাশয়গুলোতে পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। ফলে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সূত্রমতে এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন তিস্তা অববাহিকার পলিমাটি অঞ্চল এবং দিনাজপুরের কাঁকরযুক্ত বালি অঞ্চল। তিস্তার পলিমাটি অঞ্চল প্রধানত বন্যা প্লাবিত হওয়ায় জলজ প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সর্বদাই বিবেচিত হয়ে আসছে। এ অঞ্চলে অতীতে ৩০০ প্রজাতির মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। কালের বিবর্তনে জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশগত কারণে প্রায় ১৩৭ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। এ ছাড়া অর্ধশত প্রজাতির মাছ এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের মাছের অপর্যাপ্ততায় আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দিনাজপুর অঞ্চলের কাঁকর ও বালিযুক্ত মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা কম। এর পর তিস্তার উজানে  বাঁধ নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে জলশূন্যতা বিরাজ করছে। সর্বত্রই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রংপুর মৎস্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মৎস্য অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও মেরামত, সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া মৎস্যকে যান্ত্রিকীকরণের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে মাছের ঘাটতি কমে যাবে।

সর্বশেষ খবর