বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মেঘনা-যমুনার বার্জ তেলশূন্য

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

মেঘনা-যমুনার বার্জ তেলশূন্য

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ভাসমান তেল ডিপো যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বার্জ দুটি তেলশূন্য হয়ে পড়ে আছে। ডিপো দুটি তেলশূন্য থাকায় বর্তমান বোরো মৌসুমের তেল সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি দেড় হাজার ব্যারেলের মতো তেল নিয়ে আসা মেঘনা পেট্রোলিয়ামের একটি জাহাজ নাব্যতা সংকটে এ মাসের শুরুতে আসলেও কয়েকদিন বকশীগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ীর আনন্দবাজার এলাকায় নদের চরে আটকে থাকে। পরে সেসব তেল এনে দ্রুত বিকল্প পন্থায় খালাস করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো তেলবাহী জাহাজ আসছে না। ফলে এখন তেলশূন্য হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন নদীতে পানি না থাকায় তেলবাহী জাহাজ আগামী এক বছরেও আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র সহায়তা পেলে জাহাজটি চিলমারী আসতে পারবে বলে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান। জানা যায় ১৯৮৯ সালে চিলমারীতে ভাসমান তেল ডিপো পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানি স্থাপিত হয়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাটসহ চার জেলায় তাদের তেল সরবরাহ করে আসছে। তেল ডিপোটি স্থাপনের কয়েক বছরের মধ্যে পদ্মা তেল কোম্পানিটি বার্জ মেরামতের অজুহাতে চিলমারী থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এরপর থেকে মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানি দুটি এ অঞ্চলে তেল সরবরাহ করছে। এরই মধ্যে যমুনা তেল ডিপোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিপোটি তেলশূন্য হয়ে পড়ে। এমনকি ডিপোটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদও এখন শূন্য। অপরদিকে, মেঘনা তেল ডিপোটি গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে তেলশূন্য থাকার পর কোম্পানির এমটি মধুকর নামে একটি জাহাজ ২ লাখ ৬০ হাজার লিটার তেল নিয়ে চিলমারীতে আসতে নাব্যতা সংকটে আটকে যায়। পরে জাহাজটির সুপারিনটেনডেন্ট সেখানেই তেল খালাসের জন্য চিলমারী ডিপো সুপারের নিকট চিঠি লেখেন। এরপর সেখানেই খালাস করা হয়। স্থানীয়রা জানান, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট এলাকার চলতি কৃষি সেচ মৌসুমে ভাসমান তেল ডিপো থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ ব্যারেল বা ৩ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করা হয়।

এ ছাড়াও বিভিন্ন নদ-নদীতে চালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন, জমি চাষের ট্রাক্টর, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর, মাহেন্দ্র গাড়ি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত যন্ত্র চালনার জন্য প্রতিদিন আরও প্রায় ২৫০ ব্যারেল থেকে ৩০০ ব্যারেল বা ৫০-৬০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। ডিপোগুলো তেলশূন্য থাকায় তেলের চাহিদা পূরণ করতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে কৃষি ও অন্যান্য কাজে সংশ্লিষ্টদের। ফলে প্রায় প্রতিদিন ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে তেল বাজারে। শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘ দিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারাও হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ডিপো দুটি বন্ধ থাকায় এখানকার প্রায় ৩০০ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছেন। চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তেল বাজার জোড়গাছ বাজারে খুচরা তেল ব্যবসায়ী বাদল, রাশেদুল ইসলাম, মমিনুল, সুইটসহ অনেকেই বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় আমরা প্রতি লিটার তেল ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। বর্তমানে দূর থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। মেঘনা ওয়েল কোম্পানির ডিপো সুপার (অপারেশন) আইয়ুব আলী বলেন, তেল নিয়ে আসা একটি জাহাজ সম্প্রতি নাব্যতা সংকটে নদীতে আটকে পড়ায় সেখানেই খালাসের ব্যবস্থা করি। নাব্যতা সংকটে তেলবাহী জাহাজ আর আসবে কি না তা এখন অনিশ্চিত বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর