শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে নরসিংদীর মৃৎশিল্প

এক দশকে পেশা বদলেছেন প্রায় ৫০ শতাংশ শিল্পী

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

হারিয়ে যাচ্ছে নরসিংদীর মৃৎশিল্প

মাটির পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নরসিংদীর মৃৎশিল্প। হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল ও থালা- বাসন। কালের আবর্তনে এ সবের স্থান দখল করেছে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি নানা পণ্য। জীবন বাঁচাতে পেশা বদল করছেন কুমার পল্লীর লোকজন। গত এক দশকে প্রায় ৫০ শতাংশ এ পেশা ছেড়েছেন বলে জানান মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। সরেজমিন মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময়ে নরসিংদীর মৃৎশিল্পের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। বংশপরম্পরায় কুমার সম্প্রদায়ের লোকজন এ ব্যবসা করে আসছেন। জেলার শিবপুর, পলাশ ও বেলাবো উপজেলার শত শত পাল বা কুমার পরিবার জড়িত ছিল এ শিল্পের সঙ্গে। নরসিংদীর মৃৎশিল্পীদের হাতে তৈরি মাটির হাঁড়ি, থালা, গ্লাস, মসলা বাটারপাত্র, মাটির ব্যাংক, খেলনাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নদীপথে যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। আধুনিকতার ছোঁয়া আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলীন হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। কমে গেছে মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা। পুঁজি ও শ্রম দিয়ে মাটির জিনিস বানাতে গিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে মৃৎশিল্পীদের। শ্রম ও বিনিয়োগ অনুপাতে পণ্যের মূল্য পান না বলে দাবি তাদের। এ কারণে পুরনো পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে। খুঁজছেন বিকল্প কাজ। পলাশ উপজেলার পারুলিয়া মধ্যপাড়া কুমার পল্লীর সুকুমার পাল বলেন, তৈজসপত্র তৈরির জন্য এখন মাটি কিনে আনতে হয়। কেনা মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের খরচও বেশি পড়ে। এ যুগে বেশি মূল্যে এ সব জিনিস কিনতে আগ্রহ দেখান না ক্রেতারা। এতে আমাদের লোকসান গুনতে হয়। শিবপুরের যোশর গ্রামের মৃৎশিল্পী তপন পাল বলেন, এক সময় সারা বছর মাটির জিনিসপত্র তৈরি ও দোকানে দোকানে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় কাটত। এখন সময় বদলেছে। মাটির জিনিসের চাহিদা কমেছে। এ সব করে সংসার চালানো দায় হয়ে যায়। পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পাওয়া গেলে  এ শিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা করা যেত। পলাশের পারুলিয়া মধ্যপাড়া কুমার পল্লীর বয়োবৃদ্ধ ৫ বোন এই পেশায় জড়িত। স্বামীর মৃত্যুর পর তারা সবাই বাবার বাড়ি এসে এই পেশায় যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু করোনায় বেচা-বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এখন এক মুঠো ভাতের জন্য বৃত্তশালীদের কাছে ঘুরতে হয়। স্থানীয় জিনারদী ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বলেন, মৃৎশিল্পীদের জন্য পরিষদ থেকে সরকারি আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। তাছাড়া কুমার পল্লীর লোকজন কোনো সমস্যা নিয়ে আসেননি। আমার সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। এই শিল্পের ওপর সরকার ঋণ দেয়। তারা ইচ্ছে করলে সেটা নিতে পারেন।

সর্বশেষ খবর