মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

চরের মরিচে কৃষকের মুখে হাসি

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

চরের মরিচে কৃষকের মুখে হাসি

লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার চর বৈরাতি গ্রামের রায়হান মিয়া  বলেন, আগে এ চরের মানুষ বেশি করে ভুট্টার আবাদ করেছিল। এখন অন্য ফসল হয়। মরিচ চাষ করে অনেকে ভাগ্য ফিরেছে। এবার মরিচ চাষ করে কৃষকরা যে আয় করছেন। অনেক কৃষক পরের বছর আরও বেশি মরিচ চাষ করবে। শুধু রায়হানই নন, লালমনিরহাটের সদর উপজেলার চর রাজপুরের ঝন্টু মিয়া, আদিতমারির  গোর্বধন চরের অনিল চন্দ্রের কথায়ও জানা গেল তিস্তার বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে মরিচের বাম্পার ফলনের কথা। চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বালুময় জমিতে মরিচ চাষ করে ওই সব এলাকার অসংখ্য পরিবার ইতিমধ্যে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। ভালো দাম পেয়ে তাদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। অথচ এসব জমিতে ফসলের চাষ হবে। কেউ তা আগে ভাবেনি। প্রথমে বালুময় এসব জমিতে ভুট্টা চাষ করে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। ক্রমে ক্রমে তারা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি মরিচ চাষও শুরু করেন। কৃষি বিভাগ ও বেসরকারি সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর লালমনিরহাট জেলার তিস্তা ও ধরলা নদী বেষ্টিত ১১৬টি চর ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক চরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র কালিগঞ্জেই ২০০ হেক্টর জমিতে এবার মরিচের চাষ করা হয়েছে। কোনো কোনো কৃষক ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি। মৌসুমের শুরুতে কাঁচা মরিচ বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হয়েছেন তারা। বর্তমানে কাঁচা মরিচের পাশাপাশি শুকনা মরিচও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দামও ভালো পাচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে বালুকাময় পলিমাটিতে মরিচ চাষ করে চরাঞ্চলের মঙ্গাকবলিত মানুষ তাদের সেই দিন পাল্টে ফেলার সুযোগ পেয়ে তাদের মুখে এখন হাসি ফুটেছে। আদিতমারির চন্ডিমারি চরের মরিচ চাষি ভেলু মিয়া জানান, চরের জমিতে খুব সহজেই এখন মরিচ চাষ করা যাচ্ছে। তবে তিনি জানান, চরে উৎপাদিত মরিচের স্থানীয়ভাবে সুষ্ঠুু বাজারজাত করার সুযোগ না থাকায় কৃষকরা প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সদর উপজেলার রাজপুর চরের মনির সাহানুর ও আমিনুর জানান, এ বছর ভালোমানের মরিচ সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে নিম্নমানের মরিচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মণ দরে। তারপরও অন্যান্য ফসলের তুলনায় মরিচ চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। অতীতের অভাব অনটনের দিনগুলো দূর হয়ে আগামীর স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি রবি মৌসুমে জেলায়  ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 এবার গোটা জেলায় চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে, যা থেকে মরিচ উৎপাদিত হবে ২ হাজার ৮০০ টন। এর মধ্যে চরাঞ্চলেই সর্বাধিক জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এক সময় এ জেলায় মরিচের চাষ হতো অনেক কম। ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মরিচ দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণ হতো না। ফলে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে মরিচ আমদানি করে চাহিদা মেটানো হতো। আর এখন এখান থেকেই মরিচ অন্য জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, কৃষি বিভাগের তৎপরতায় চরাঞ্চলের জমিগুলোতে কৃষকরা মরিচ চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। ফলে নদী সংলগ্ন হাটগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তাই হাটগুলোতে এখন সারা বছর কাঁচা, পাকা ও শুকনা মরিচের ব্যবসা জমে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, কম খরচে ও শ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় জেলার তিস্তা ধরলা চরের মানুষের কাছে মরিচ একটি লাভজনক ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর