শিরোনাম
রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বেচ্ছাশ্রমে আড়িয়াল খাঁ নদে ৪০০ ফুট সেতু

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

স্বেচ্ছাশ্রমে আড়িয়াল খাঁ নদে ৪০০ ফুট সেতু

দশের লাঠি একের বোঝা। আবার অনেকে বলেন দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ। সম্মিলিত শক্তির কোনো বিকল্প নেই। একা একা কোনো কাজ যখন অসম্ভব হয়ে ওঠে, তখন সম্মিলিত শক্তিতে তা সহজেই করা সম্ভব হয়ে ওঠে। এই প্রবাদটা পুনরায় প্রমাণ করেছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় চর আড়ালিয়া ইউনিয়নের মাছিমনগর ও আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের বাসিন্দারা। যাতায়তের সুবিধার্থে দুই গ্রামের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর ৪০০ ফুট দৈর্ঘের কাঠের সেতু নির্মাণ করেছেন। এর ফলে চর আড়ালিয়া ইউনিয়ন ও আমিরগঞ্জ ইউনিয়নসহ ৫ টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের পথ সুগম হয়েছে।  সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় গ্রামের মানুষ নিজেরাই নিজেদের উদ্যোগে এ সেতু নির্মাণ করেন।  সেতু নির্মাণে কাঠ, বাঁশ ও রংসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। জানা যায়, আমিরগঞ্জ ইউনিয়ন ও চর আড়ালিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রায়পুরার পশ্চিমাঞ্চল। দুই ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে মেঘনার শাখা আড়িয়াল খাঁ নদ। এই নদের শাখাকে সীমানা ধরেই ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ১৯৬৫ সালে আমীরগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে বিভক্ত হয়ে চর আড়ালিয়া ইউনিয়ন গঠিত হয়। সেই ইউনিয়নের ৬, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বটতলী গ্রাম। এ গ্রামে প্রায় দশ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের যাতায়াতের প্রধান পথ এই নদ। এই গ্রামে নেই কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নেই হাটবাজার। এখানকার মানুষ সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা  থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। নৌকার ওপর ভরসা করে নদের অপর পাড় মির্জানগর, হাসনাবাদ ও মনিপুরার স্থানীয় কয়েকটি স্কুলে যেতে হয় এখানকার শিক্ষার্থীদের। জরুরি রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়াটাও একটা যুদ্ধের মতো পরিশ্রম। সময়মতো পাওয়া যায় না নৌকা। আবার কখনো কখনো নৌকা পাওয়া গেলেও বর্ষাকালে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নদের  স্রোত ও কচুরিপানা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে এই নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

দিলেও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সর্বশেষ সব আশ্বাসের অবসান ঘটিয়ে গ্রামবাসীদের উদ্যোগ ও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হলো এই কাঠের সেতু। দীর্ঘ এক মাস টানা কাজ করার পর চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি থেকে সেতু ব্যবহারে দুই পারের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর ফলে আমিরগঞ্জ, নিলক্ষা, হাইরমারা, চরসুবুদ্দি ইউনিয়ন মানুষদের বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। জসিম নামে এক এলাকাবাসী জানান, জন্মের পর থেকেই অনেক কষ্ট করেছি। যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। নৌকার ওপর ভরসা করে চলতে হয়। ঝড়-তুফানের দিনে নৌকাও থাকে না। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আরিফ হোসেন জানান, এই  সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দুই পারের মানুষের মধ্যে একটা সম্প্রীতি তৈরি হয়েছে। যা গ্রামীণ জনপদের উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সর্বশেষ খবর