সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা বাইশরশি জমিদারবাড়ি

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা বাইশরশি জমিদারবাড়ি

বৃহত্তর ফরিদপুরের বিখ্যাত স্থানসমূহের মধ্যে বাইশরশি জমিদারবাড়ির নাম ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর। ফরিদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে বর্তমান সদরপুরের আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরিফের কাছাকাছি অবস্থিত বাইশরশি জমিদারবাড়িটি। এককালে প্রতাবশালী বাইশরশি জমিদাররা ফরিদপুর-বরিশালসহ ২২টি পরগনার বা জোত মহলের অধিপতি ছিলেন। জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি তখনকার দিনে বাইশরশির বাড়িটির প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে বাগানবাড়ি, পুকুর, মন্দির ও দ্বিতলাবিশিষ্ট ছোট বড় ১৪টি দালানকোঠা দিয়ে ঢেলে সাজিয়ে ছিলেন। যা আজ ভগ্নদশায় ধ্বংস স্তূপের মধ্যে কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানটিতে সরকার একটু নজর দিলে হতে পারে দেশের মধ্যে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। জানা গেছে, ১৭শ শতাব্দীর গোড়াপত্তনে এককালের লবণ ব্যবসায়ী সাহা পরিবার বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়ে কয়েকটি জমিদারি পরগনা কিনে জমিদারি প্রথার গোড়াপত্তন শুরু করেন। ১৮শ শতক থেকে ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের আগে পর্যন্ত জমিদার পরিবারটি অনেক ধন-সম্পদের মালিক হন। পরে ২২টি জমিদারি পরগনা ক্রয় করে বিশাল জমিদার হিসেবে ভারতবর্ষে খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হিন্দুস্থান হওয়ার পর ১৯৪৭ থেকে ১৯৬২ সাল জমিদারি প্রথা থাকার আগ পর্যন্ত জমিদাররা কলকাতায় বসে জমিদারি দেখাশোনা করতেন। জমিদারি প্রথা বাতিল হওয়ার পর জমিদার সুকুমার রায় বাহাদুর ছাড়া সবাই কলকাতা চলে যান। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ওই সুকুমার বাবু আত্মহত্যা করেন। এরপর বাড়িটির আর কোনো অভিভাবক না থাকায় পরিত্যক্ত বাড়ি হিসেবে গণ্য হয়। বর্তমানে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর জমিদারবাড়িটির অবস্থান হলেও চারপাশের অনেক জমি অবৈধ দখলে। বর্তমানে ৫টি সান বাঁধানো পুকুর, বিশাল বাগানবাড়ি ও ছোট বড় ১৪টি কারুকার্য খচিত দালানকোঠা জমিদারদের কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিনিয়ত চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান দরজা-জানালা, লোহার কারুকার্য খচিত প্রত্নতত্ত্ব।

বাড়িটিতে বর্তমানে উপজেলা ভূমি অফিস রয়েছে। রাতের বেলায় চোর ডাকাতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসী সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না। স্থানীয়দের দাবি, বাইশরশি জমিরদারবাড়ির প্রায় ৩০ একর জমির ওপর একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করার। শুধু পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তহীনতার অভাবে আজ হারিয়ে যাচ্ছে জমিদারবাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য। বর্তমানে সরকারের তত্ত্বাবধানে নিয়ে এ স্থানটি রক্ষার জন্য একটা কিছুর করার প্রয়োজন বলে স্থানীয়দের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

 

সর্বশেষ খবর