সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

‘একটি কুঁড়ি দুটি পাতা’ সংগ্রহ শুরু

লক্ষ্যমাত্রা ৪ কোটি ৫০ লাখ কেজি কাঁচা চা পাতা

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

‘একটি কুঁড়ি দুটি পাতা’ সংগ্রহ শুরু

প্রতি বছর শীতের সময় চা বাগানের চা গাছগুলোতে পাতার বৃদ্ধি কমে যায়। এ সময় চা চাষিরা চা পাতা সংগ্রহ করেন না। এ সময় তারা চা গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলেন। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে বলা হয় প্রুনিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে চা বাগানে পাতা ঘন হয় এবং বৃদ্ধি পায়। তাই জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে চা চাষিরা চা পাতা সংগ্রহ বন্ধ রেখে চা প্রুনিং করেন। এ সময় কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাগুলোর মেশিনপত্র ধোয়ামোছা করে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়। তাই চায়ের মৌসুম শুরু হয় মার্চ থেকে। বর্তমানে গাছে গাছে মুকুলের সমাহার আর চা বাগানগুলোতে ছড়িয়েছে নতুন পাতা, নতুন কুঁড়ি। দুই মাস বন্ধ থাকার পর পঞ্চগড়সহ রংপুর অঞ্চলের সমতল ভূমির চা বাগানগুলোতে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে কাঁচা পাতা সংগহ। চা কারখানাগুলো শুরু করছে তৈরি চা উৎপাদনের কার্যক্রম। তাই ক্ষুদ্র চা চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ-উদ্দীপনা। চা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এ মৌসুমে ১ কোটি কেজি তৈরি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাঁচা চা পাতার ক্রয়মূল্য এখনো নির্ধারণ করেনি চা ক্রয় কমিটি। তবে আগের নির্ধারিত মূল্যেই চাষিদের কাছ থেকে চা পাতা ক্রয়ের জন্য কারখানাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশের সর্বউত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গে আজ থেকে শুরু হচ্ছে চা পাতা সংগ্রহ এবং উৎপাদনের কার্যক্রম। পঞ্চগড়সহ ১৮টি কারখানা গতকাল থেকে চা উৎপাদন শুরু করেছে। ৪ কোটি ৫০ লাখ কেজি কাঁচা চা পাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ চা বাগানগুলো থেকে শুরু হচ্ছে চা পাতা সংগ্রহ। ক্ষুদ্র চা চাষিরা বলছেন গত মৌসুমের প্রথমদিকে চা পাতার দাম ছিল অত্যন্ত কম। মধ্যম এবং শেষের দিকে চা পাতার ভালো মূল্য পেয়েছিলেন তারা। এবার এখনো মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। তাই তারা কাঁচা পাতা বিক্রয় মূল্য নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। তারা সরকারের কাছে চা পাতার ন্যায্যমূল্য দাবি করেছেন। চা চাষি নূর নবী জিন্নাহ জানান, মাঝে মাঝে কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে চা পাতার দাম কমিয়ে দেয়। তখন আমরা লোকসানে পড়ি। চায়ের মূল্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করলে ভালো হয়। জানা গেছে, প্রথম দিনই কারখানায় ১৯ টাকা কেজি দরে কাঁচা পাতা কেনা শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী এবং লালমনিরহাট জেলায় ১০টি নিবন্ধিত, ১৭টি অনিবন্ধিত বড় চা বাগান এবং ৭ হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। গত দুই দশক থেকে এ অঞ্চলে মোট ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে।

 এসব চা বাগান থেকে ২০২০ সালে ৫ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৬ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে। এসব কাঁচা পাতা থেকে ১ কোটি ৩ লাখ অর্থাৎ ১০.৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর জাতীয়ভাবে চা উৎপাদন হয়েছে ৮৬.৩৯  মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৬০ লাখ ৩৯ হাজার কেজি। ২০২০ সালে অন্যান্য এলাকায় চায়ের উৎপাদন কিছুটা কমলেও উৎপাদন বেড়েছে উত্তরাঞ্চলে। আর এসব চা বাগানে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। তারা বলছেন মৌসুমজুড়ে একই রকম পরিশ্রম করলেও সঠিক মজুরি পান না তারা। কাঁচা পাতার দাম কমে গেলে চা বাগানের মালিকরা তাদের দৈনিক মজুরিও কমিয়ে দেন। তাদের দাবি কাঁচা পাতার মূল্য নির্ধারণ করে তাদের মজুরিও যেন বৃদ্ধি করে চা চাষিরা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক  ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান ২০২০ সালে উত্তরবঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চা উৎপাদনে দেশে রেকর্ড স্থাপন করেছে। আমরা চা চাষিদের সব রকম সহযোগিতা দিচ্ছি।

চা চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত চা চাষ বাড়ছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর