শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে চলনবিলের নদ-নদী

নাসিম উদ্দীন নাসিম

হারিয়ে যাচ্ছে চলনবিলের নদ-নদী

চলনবিলে আত্রাই নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উত্তরের চার জেলা নাটোর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার কিছু অংশ নিয়ে চলনবিলের অবস্থান। এই চলনবিলের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বেশকিছু নদ-নদী। এর মধ্যে আত্রাই, নন্দকুজা ও গুমানীসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি শুকিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-চলাচল। বর্ষা মৌসুমে এ সব নদীর ভরা যৌবন থাকলেও বর্ষা শেষে আর পানি থাকে না। দখল, দূষণ আর ভরাটের কারণে সংকুচিত হওয়ায় মরে যাচ্ছে নদীগুলো। ফলে কৃষি জমির সেচ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশি মাছ উৎপাদন ও জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে । এ সব নদী ঘীরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। জানা যায়, স্বল্প খরচ, সহজলভ্য এবং অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এক সময়ে নৌ-পথ ছিল চলনবিল এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। নদীগুলোর নেই চেনা রূপ এখন আর নেই। নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে নন্দকুজা ও আত্রাইসহ বিভিন্ন নদীর সৌন্দর্য্য, জৌলুস ও স্বকীয়তা। নৌযানের মাধমে পণ্য পরিবহনে খরচ কম হলেও বর্তমানে এলাকার সব নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধিক খরচে ব্যবসায়ীদের স্থলপথে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেদওয়ানুর রহমানের রেখা প্রবন্ধ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, প্রায় ২৯ বছর আগেও চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে বছর জুড়ে ৬-১২ ফুট পানি থাকত। এ সব নদীতে সারা বছর নৌযান চলাচল করত। বছরের পর বছর পলি জমে নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। অথচ নদী আর নৌকা ঘিরে চলনবিলের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নাজিরপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুর, তাড়াশের ধামাইচ, নাদো সৈয়দপুর, চাটমোহরের ছাইকোলা, অষ্টমনিষা, মির্জাপুর ভাঙ্গুড়ায় গড়ে উঠেছিল নৌ-বন্দর। সেখানে চলত রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। সে সব এখন শুধুই ইতিহাস। সিংড়া বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, তারা এক সময় নৌকায় শত শত মণ ধান, পাট, গম সরিষাসহ চলনবিল উৎপাদিত সব কৃষি পণ্য ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যেতেন। আবার সে সব মোকাম থেকে নানা পণ্য এখানে এনে পাইকারি দামে বিক্রি করা হতো। কম খরচে সহজলভ্য পরিবহন সুবিধা এখন আর তারা পান না।

সর্বশেষ খবর