রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বর্জ্যে অনাবাদি ২ হাজার একর জমি

বিষাক্ত রংমিশ্রিত পানির কারণে জলাশয়ে কোনো মাছ নেই। ফসল ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে বছরে পর বছর

আসাদুজ্জামান সুমন, ভালুকা

বর্জ্যে অনাবাদি ২ হাজার একর জমি

ময়মনসিংহের ভালুকায় বর্জ্যে অনাবাদি দুই হাজার একর জমি একটি প্রভাবশালী মহলের মালিকাধীন শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্যের কারণে গত এক যুগে ছয় গ্রামের এসব জমি অনাবাদি রয়েছে। এতে কৃষকরা প্রতি বছর হাজার হাজার টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলার ভরাডোবা গ্রামে অবস্থিত ওই মিলের বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত পানি নিঃসরণ বন্ধের দাবিতে ইতিমধ্যে কয়েকবার মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ, ইউএনও অফিস ঘেরাও, বিক্ষোভ এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন কৃষকরা। সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ভরাডোবা ও বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাহাচড়া বিল, হাউড্ডা বিল, খুরুলিয়া বিল, সাধুয়া বিল, ভালুকজানি বিল, গায়লা বিল, তালতলা বিল, কেচুরগোনা বিল, তেইরা বিল, শিমুলিয়া বিল, সাউত্তার কুড়ি, তৌরা বিল, ডিমাইল বিল, মলেঙ্গা বিল, বালিপাথর বিল, কাইল্লানির পাথরের প্রায় দুই হাজার একর জমিতে এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল (পাকিস্তানি) মিলের বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত পানির কারণে প্রায় এক যুগ ধরে কৃষকরা ধান লাগাতে পারছেন না। সারা বছরই বিলগুলোতে দূষিত পানি আটকে থাকে। দীর্ঘদিন আবাদ না হওয়ায় ওইসব বিল কচুরিপানায় ভরে গেছে। বিষাক্ত পানির কারণে এখন আর বিলগুলোতে কোনো মাছ উৎপাদন হয় না। এমনকি পানিতে নামলে চুলকানিসহ শরীরে নানা রোগ সৃষ্টি হয়। জানা যায়, কয়েক বছর আগে পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন করে মিল কর্তৃপক্ষকে ২ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেন। একই সঙ্গে ইটিপি ত্রুটিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মিল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এরপর কিছুদিন মিল বন্ধ থাকলেও আবার তা চালু হয় এবং দূষিত পানিমিশ্রিত বর্জ্য প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্যসচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল বলেন, ‘দূষিত বর্জ্যরে কারণে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় কৃষকরা তাদের জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না। বিষাক্ত রংমিশ্রিত পানির কারণে জলাশয়ে কোনো মাছ নেই। ফসল ও জীববৈচিত্র্যের এত ক্ষতিসাধনের পরও কীভাবে কারখানাটি চলমান রয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম তরফদার জানান, ‘আমি পরিবেশ অধিদফতরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কোনো প্রতিকার পায়নি।’ এক্সপিরিয়েন্স মিলের অ্যাডমিন ম্যানেজার সাইফ আহাম্মেদ সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোন কেটে দেন। পরে মেসেজ পাঠালে তার জবাব দেননি। পরে মিল গেটে গেলেও তিনি দেখা করবেন না বলে জানান। পরিবেশ অধিদফতর ময়মনসিংহের পরিচালক ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘এই কারখানার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই।’ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। ইউএনও সালমা খাতুন জানান, ‘পরিদর্শন করেছি শিগগিরই প্রয়োজন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 কৃষকদের করুণ অবস্থার কথা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর