সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

অযত্ন-অবহেলায় বধ্যভূমি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

অযত্ন-অবহেলায় বধ্যভূমি

বামনদহ বিল এলাকায় নিশ্চিহ্নের পথে গণকবর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নওগাঁর মহাদেবপুরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবরগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বধ্যভূমিগুলো অযতেœ আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে। নতুন প্রজন্মরা জানতে পারছে না সে জায়গাগুলোতে শুয়ে রয়েছেন মুক্তিকামী বীর বাঙালিরা। প্রবীণরাও ভুলতে বসেছেন তাদের। সরকারি উদ্যোগে এসব বধ্যভূমি সম্পর্কে  তেমন কোনো তথ্যাদি সংরক্ষণ করা হয়নি। জানা যায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের উপজেলা কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের কোনে, রঞ্জনীতলা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা, ডাকবাংলো মাঠের পশ্চিম পাশে, আত্রাই নদী সংলগ্ন রাবেয়া পল্লী, আখেড়া গ্রামে, সিদ্দিকপুর গ্রামে, চেরাগপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামে, চকদৌলত গ্রামে, খাজুর ইউনিয়নের দেবীপুর মোড়ে, হাতুড় ইউনিয়নের মহিষবাথান গ্রামের বামনদহ বিল এলাকায় গণকবর রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শুধু বাজিতপুর গ্রামে গণকবরে নওগাঁ জেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। তবে সেখানে সীমানা নির্ধারণ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ না করায় অরক্ষিত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর ব্যাপারে কোনোই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। মহাদেবপুর-পোরশা সড়কের খাজুর ইউনিয়নের দেবীপুর মোড় এলাকায় রয়েছে একটি গণকবর। ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় বর্বর পাকবাহিনী এলাকার ১৩ জন মুক্তিকামী বাঙালিকে ধরে এনে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। অমূল্য চন্দ্র বর্ম্মণ নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ বলেন, তার পিতা গোপাল চন্দ্র বর্ম্মণকে হত্যা করা হয়েছিল ওখানে। অমূল্য জানালেন দেবীপুর গ্রামে বাড়ি তাদের। ঘটনার দিন তিনি অন্য গ্রামে ছিলেন। পরে জানতে পারেন হানাদার বাহিনী তার পিতাসহ ১৩ জনকে হত্যা করে।

চেরাগপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামে পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত ৬জন মুক্তিকামী শহীদের নাম খোদাই করা হয়েছে। এরা হলেন, জাহান আলী সরদার, জফি উদ্দিন সরদার, শফিউদ্দিন, আবদুল জলিল মন্ডল, তায়েজ উদ্দিন মন্ডল ও হোসেন উদ্দিন। ওই গ্রামের পাশে চকদৌলত গ্রামে রয়েছে আরও একটি গণকবর। এখনে তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকবাহিনী। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বদিউজ্জামান জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে ট্রেনিং নিয়ে নওগাঁ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নেন। পাক হানাদার বাহিনী মহাদেবপুর সদরের ডাকবাংলোতে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার স্থাপন করে। রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি নামে এদেশের দোসরদের সহযোগিতায় বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, খুন ও ধর্ষণে লিপ্ত হয়। গণকবরগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ১১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর বাঁধাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর