মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

গাইবান্ধায় নাব্য সংকটে নৌ-রুট

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় নাব্য সংকটে নৌ-রুট

জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় সবগুলো নদন্ডনদীই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। বড় নদী যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার বুকজুড়ে এখন শুধুই চর আর চর। অন্যদিকে ছোট নদী ঘাঘট, আলাই, বাঙালি, মানস ও করতোয়াতেও নেই পানি। নদীগুলোর বুকজুড়ে শুরু হয়েছে চাষাবাদ। জেলার অধিকাংশ নৌরুটই এখন বন্ধ। এবারও বিগত বছরগুলোর মতো অক্টোবর মাস থেকেই জেলার নদন্ডনদীগুলোর পানি কমতে শুরু করে তলানিতে এসে ঠেকেছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের ১৬৫টি চরে বসবাস করেন। তাদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ হলেও এখন ২০/২৫ মাইল বালুচর ও নদী পায়ে হেঁটেই  গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় চলছে ঘোড়ার গাড়ি।

 ফুলছড়ির বালাসীঘাট এলাকায় দেখা যায় ব্রহ্মপুত্র নদ পুরাতন ঘাট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চলে গিয়েছে। সেখানে শীর্ণকায় নদে নোঙর করা নৌকায় পৌঁছতে চালু হয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। জনপ্রতি ৩০ টাকা করে নিয়ে তাদের নৌঘাটে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বালাসী নৌঘাটের টোল আদায়কারী জাহিদুল ইসলাম জানান, জেলার সবচেয়ে বড় নৌঘাট বালাসী ঘাট। এখান থেকে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, জামালপুর,  জেলার ১৫টি উপজেলায় ৩০টি রুটে নৌযান চলাচল করত। চর জেগে ওঠায় এখন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর, জামালপুরের সানন্দবাড়ি, খোলাবাড়ি, ফুটানিবাজার, মুরাদাবাদ গাইবান্ধার খাটিয়ামারি, জিগাবাড়ি, হরিচন্ডি, কাইয়াবাধা, কুন্দের পাড়সহ মোট ১১টি রুটে নৌকা চলাচল করতে পারছে। ঘুরপথে দ্বিগুণ সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় বলে নৌকার সংখ্যাও কমে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া বলেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। স্থলভাগ থেকে পণ্যসামগ্রী যেমন চরের কারণে নৌকায় তোলা যাচ্ছে না তেমনি চরের জমিতে উৎপন্ন ফসলও স্থলভাগে আনা যাচ্ছে না। পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ বছর থেকেই নদনদীগুলোর এ অবস্থা। সামনের বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসের আগে নদনদীতে পানি আসবে না। বেশিরভাগ সময় পানিশূন্য থাকায় দেশীয় মাছও আর পাওয়া যায় না। চরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। রোগীসহ যাতায়াত এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও কৃষি পণ্য পরিবহনে তাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এদিক নদন্ডনদীর শুকনো বুকে এবং জেগে ওঠা চরে মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, ধান, মিষ্টি আলু, কাউনসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান জানান, গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মোট ১৫ হাজার হেক্টর চরের জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের উপকরণ সহযোগিতাসহ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, বর্তমানে নদীগুলোতে কোনো ড্রেজিং হচ্ছে না। তবে যমুনা নদীকে ২ থেকে ৩টি চ্যানেলে বিভক্ত করে সেগুলো  স্থায়ী চ্যানেল করা যায় কিনা সে বিষয়ে সমীক্ষা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর