বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

অনুমোদনহীন সমিতির রমরমা কারবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁ ও তার পার্শ্ববর্তী সান্তাহারে অনুমোদনহীন ব্যবসায়িক সমিতির আড়ালে চলছে উচ্চহারে সুদের রমরমা ব্যবসা। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে শুধু  পৌরসভার ট্রেড সনদ নিয়ে প্রতারণা করে চালানো হচ্ছে সুদের কারবার। এতে ছোটখাটো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নিম্নপর্যায়ের দিনমজুরদের গুনতে হচ্ছে বড় অঙ্কের সুদ। আর প্রশাসনকে এড়িয়ে রাতারাতি কলা গাছে পরিণত হয়েছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, সান্তাহার পৌর শহরের কয়েক যুবক এক সময় এনজিওতে কাজ করতেন। পরে তিনি সান্তাহার  পৌরসভা থেকে তামিম সঞ্চয় ও ঋণদান প্রতিষ্ঠান নামে একটি ট্রেড সনদপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর বই ছাপিয়ে ট্রেড সনদের নাম ব্যবহার না করে শুধু ব্যবসায়িক সমিতি নাম দিয়ে শুরু করেন সুদের কারবার। যা প্রতিদিন সদস্যদের কাছ থেকে সুদের টাকা আদায় করছেন। যে নামটি পৌরসভা ট্রেড সনদপত্রে ব্যবহার করা হয়েছে আসলে এ নামে পৌর শহরের কোথায়ও কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। একদিকে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি। অপরদিকে ট্রেড সনদের নাম ব্যবহার না করে অন্য নামে নিজ বাড়ি থেকে সুদের কারবার পরিচালনা করে আসছেন তিনি। এ  যেন প্রতারণার ওপর প্রতারণা এমনটাই বলছেন অনেকে। নিয়ম অনুসারে সনদপত্র অনুযায়ী ওই পৌরসভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনার কথা থাকলেও ওই যুবক দল নওগাঁ সদর থানার পশ্চিম ঢাকা রোড, কাঁঠালতলীর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অনাধিকার প্রবেশ করে এই রমরমা সুদের ব্যবসা করে আসছেন। এ ছাড়াও শূন্য সংখ্যা দিয়ে কোনো হিসাব নম্বর শুরু করার নিয়ম না থাকলেও সদস্যের কাছে তার সরবরাহকৃত বইয়ে শূন্য দিয়ে হিসাব নম্বর শুরু করা হয়েছে। ওই বই থেকে আরও জানা যায়, সান্তাহার শহরের মাসুদ নামের ওই গ্রাহক নাজমুলের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ঋণগ্রহণ করেছিলেন। মোট কিস্তির পরিমাণ ছিল ৩৯টি। সার্ভিস চার্জসহ তাকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। অর্থাৎ মাসুদের কাছ থেকে শতকরা ৩০ টাকা হারে সুদ আদায় করেছে নাজমুল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় রয়েছেন।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাসুদ বলেন, নাজমুলের কাছে ঋণ চাইলে প্রথমে সে আমাকে শূন্য অক্ষর দিয়ে একটি হিসাব খুলে দেয়। এরপর সে আমাকে ৩ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিল। সুদসহ আমাকে ৩ হাজার ৯০০ টাকায় ১০০ দিনে পরিশোধ করতে হয়। সে অনেক টাকা সুদ  নেয় কিন্তু করার কিছু নেই। আমার মতো অনেকে তার কাছ থেকে টাকা নেয়। তারা বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে এই ব্যবসা চালিয়ে আজ লাখপতি হয়ে  গেছেন। আদমদীঘি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, যেখানে সমবায় নাম নেই সেক্ষেত্রে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। যেহেতু বিষয়টি দাদন ব্যবসা সম্পর্কিত তাই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেখবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন বলেন, এ ধরনের ফাঁদে যাতে সাধারণ মানুষ না পড়ে সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার প্রয়োজন। অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নওগাঁ জেলা সমবায় কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া পৌরসভাসহ কোনো প্রতিষ্ঠান সনদপত্র দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আর সমবায় আইন অনুসারে কেউ ট্রেড সনদপত্র নিয়ে উচ্চহারে সুদের ব্যবসা করতে পারেন না। এটি সম্পন্ন আইন বহির্ভূত। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে তারা কঠোর প্রদক্ষেপ নিতে বাধ্য।

 

সর্বশেষ খবর