সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

নওগাঁর ছয় নদীতে ফসলের আবাদ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর ছয় নদীতে ফসলের আবাদ

বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয় রয়েছে ছয়টি নদী। নদীগুলো হচ্ছে আত্রাই, ছোট যমুনা, তুলশীগঙ্গা, শিব, পুনর্ভবা ও নাগর। নওগাঁ সদর-বদলগাছী ও রানীনগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা, পতœীতলা-মহাদেবপুর-মান্দা-আত্রাই উপজেলার ওপর দিয়ে আত্রাই, সাপাহার-পোরশা উপজেলার ওপর দিয়ে পুনর্ভবা, নিয়ামতপুর-মান্দা উপজেলার ওপর দিয়ে শিব, সাপাহার-পোরশা উপজেলার ওপর দিয়ে আত্রাই, নওগাঁ সদর-রানীনগর উপজেলার ওপর দিয়ে তুলসীগঙ্গা এবং রানীনগর-আত্রাই উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নাগর নদ। জেলার মধ্যে অন্যতম নদী হচ্ছে ছোট যমুনা ও তুলশীগঙ্গা নদী। এক সময় বছরের সব সময় এসব নদীতে পানি থাকত ভরা। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহন করার মাধ্যম বলতে এই নদীগুলোয় ছিল একমাত্র পথ। কত পালতোলা নৌকা জেলার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালামাল বহন করে নিয়ে গেছে এসব নদী দিয়ে। জেলেরা সারা বছর এসব নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে সেই দিনগুলো শুধুই অতীত। এখন এসব নদী মৃতপ্রায়। এক সময়ের স্রোতস্বিনী আত্রাই ও পুনর্ভবা নদী পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রতি বছর পলি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে এই খরস্রোতা নদীটি। ইতিমধ্যে অধিকাংশ এলাকা ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ড্রেজিং না করায় নদীর দুই পাড়ের জমি প্রভাবশালীর অবৈধ দখলে রয়েছে। একই অবস্থা অন্যসব নদীরও। জেলার প্রধান প্রাণকেন্দ্র ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত নওগাঁ শহর। এই নদীর তীরেই অবস্থিত কোর্ট, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সব সরকারি দফতর। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা ও তুলশীগঙ্গা এক সময়ের খরস্রোতা নদী বর্তমানে দখল আর দূষণের শিকার হয়ে মরতে বসেছে। নদীর দুই পাশে দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বড় বড় ভবন ও শিল্পকারখানা। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খনন না করার কারণে পলি জমে কমে গেছে নদীর নাব্য। নদীটি এখন শহরবাসীর ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করত এই ছোট যমুনা নদী। বড় বড় নৌকা ভিড়ত নদীতে। ধান পাটসহ নানা পণ্য এখান থেকে নদীপথে চলে যেত রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কৃষি ক্ষেত্রেও ছিল অনবদ্য ভূমিকা। কিন্তু কালের প্রবাহে নদীটি তার রূপ হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও খরা মৌসুমে প্রতি বছর নদীটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। বর্তমানে নদীর উভয় পার্শ্বে ফ্লাডওয়াল নির্মিত হওয়ায় শহরের নদীর উভয় পাশের বাসিন্দারা তাদের পরিত্যক্ত সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছে।

 পুরো নদীটি এখন যেন একটি বিশাল ডাস্টবিন। যার যখন মনে হয় তখন তাদের ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলছে। এতে নদীটির পানি দূষণসহ পরিধি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে নদী দূষণের পরিমাণ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এক সময় এসব নদীতে ছিল মাছে ভরপুর কিন্তু পানি দূষণের কারণে শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুম ছাড়া আর মাছ পাওয়া যায় না। এতে করে অনেক জেলেরা তাদের পৈতৃক পেশাটি বদলিয়ে ফেলেছেন। আবার কোথাও প্রভাবশালীরা নদীর দুই ধার অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলেছে ভবন ও কলকারখানা। দিনের পর দিন পলি জমে নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায় সারা বছর আর নদীতে পানি থাকে না। জেগে উঠেছে নদীর দুই তীর। যেসব স্থানে পানি শুকিয়ে গেছে সেসব স্থান দখল করে নদীর বুক চিরে কোথাও ধান, কোথাও সরিষা, আবার কোথাও আলুসহ নানা প্রকারের ফসলের চাষাবাদ। আবার কোথাও অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালি যার কারণে নদী যৌবন হারিয়ে দ্রুত মরে যাচ্ছে। ফলে এক সময়ের খর¯্রােতা এবং ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র এই নদীটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে তার রূপ হারিয়ে ফেলছে। এসবের হাত থেকে নদীটিকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন শহরবাসী। নওগাঁ শহরের বাসিন্দা মিলন হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন, আমিনুর রহমান বলেন, ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা ক্ষতিকর জেনেও কেবলমাত্র শহরে কোনো ডাস্টবিন না থাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো জায়গা নেই বলেই তারা বাধ্য হয়ে ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলছেন। নওগাঁ শহরের বাসিন্দা গৃহিণী নুরজাহান বেগম বলেন, ছোটবেলায় এই নদীতে অনেক গোসল করেছি। নদীর পানি দিয়ে রান্না করেছি কিন্তু বর্তমানে নদীর পানির দুর্গন্ধে নদীর তীরে এসে বসার জো নেই। দূষণ আর দখলের কবলে এক সময়ের যৌবনদীপ্ত নদীটি বর্তমানে মরতে বসেছে। কারও নজর নেই নদীটির দিকে। সবার উচিত আগামীর সুন্দর প্রজন্ম ও সুস্থ পৃথিবীর জন্য এই নদীটিকে বাঁচানোর জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া। আত্রাই উপজেলার মধুগুড়নই গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যুগ যুগ থেকে নদীপথে নৌকা নিয়ে মাটির তৈরি মালামালের ব্যবসা করে থাকি। মাটির তৈরি ডাবর, টালি, পাতিল, কলসসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী নৌকাযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়েছে। নদী পানিশূন্য হয়ে যাওয়ায় বোরো সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার কৃষক। বিপ্রবোয়ালিয়া গ্রামের আবদুর রউফ বলেন, নদীর পানি সেচে বোরো চাষ করলে আমাদের খরচ হয় বিঘাপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। অথচ নদী পানিশূন্য হওয়ায় মাঠে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে অনেক গুণ বেশি।

সর্বশেষ খবর