বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট অকেজো

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট অকেজো

বাগেরহাটের উপকূলীয় দুটি উপজেলা  রামপাল ও মোংলায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে নির্মিত ‘সয়ংক্রিয় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট’ স্থানীয় এলাকাবাসীর চোখের কাটায় পরিণত হয়েছে। লবণাক্ত এই অঞ্চলের দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষের সুপেয় পানি পাওয়ার আশায় ‘গুঁড়ে বালি’তে পরিণত হয়েছে। নির্মাণের পর অকেজো হয়ে পড়েছে অধিকাংশ পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আর জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি স্থানীয়দের সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য বাগেরহাট জেলার দুস্থ ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২টি ‘সয়ংক্রিয় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট’ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। বিগত ২০২০ সালের জুলাই মাসের দিকে মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রথম এই পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়েই ১৫টি ইউনিট নির্মাণ করা হয়। উপকারভোগীদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়া এবং নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু করার অভিযোগ উঠলে এই আসনের সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহারকে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। এরপর সেই ১৫টি ইউনিট ভেঙে আবার নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প মেয়াদে মোংলায় ১৩৫টির মধ্যে ৪৪টি এবং রামপালে ৬৭টির মধ্যে ২৬টি ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছে।

 কিন্ত নির্মাণের পর পরই এর বেশির ভাগ ইউনিট ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন-২ শাখার পত্রে প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন এলাকায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে অনুমোদিত প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট তথ্য সম্বলিত দৃশ্যমান সাইনবোর্ড স্থাপন করার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় পুকুর দিয়ে পনি এনে বড় পানির ট্যাকিংতে রাখতে হবে। সোলারে প্লেটে বিদ্যুৎ তৈরি হয়ে তা দিয়ে পানি উঠে প্যানেলে যাবে। সূর্যের আলোতে বাষ্প হয়ে সেই পানি ৫টি প্যানেল ঘুরে আবার ছোট পানির ট্যাকিংতে এসে জমা হবে। সেখান থেকে জনসাধারণ সুপেয় পানি নিবে। প্রতিটা ইউনিটের ব্যয় ধরা হয়েছে, ৩ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এই বড় পানির ট্যাকিংতে পানি তোলার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আর বেশির ভাগ ইউনিটে পানি দেওয়া থাকলেও সুপেয় পানি উৎপাদন হচ্ছে না।   মোংলা উপজেলার মাকড়ডন গ্রামের ফজলুর রহমান বলেন, পানির প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে দেখে মনে করেছিলাম আমাদের পানির কষ্ট বুঝি কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু নির্মাণের ১০দিন পর থেকে এই প্ল্যান্ট থেকে কেউ একফোঁটা পানিও নিতে পারছে না। কোথায় কি সমস্যা হয়েছে তা দেখারও কেউ নেই। একই এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। পানির প্ল্যান্ট তৈরি করার পরপরেই নষ্ট হয়ে গেছে। কোনোভাবে রেখেই সবাই কেটে পড়েছে। তাছাড়া আমরা ঝড়-বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। কোনো রকমে দায়সারাভাবে যে পানির প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে তা সামান্য ঝড় এলেই আকাশে উড়বে। এটা সরকারি অর্থ লুটপাট ছাড়া আর কিছুই না! এই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক (অভিযোজন)  মো. ইসকান্দার হোসেন বলেন, কিছু কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ার পর সমাধান করা হবে। এ বিষয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আহম্মদ বলেন, আমাদের আট শতাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রতিটা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিষয়টি দেখে থাকেন।

সর্বশেষ খবর