বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

লাল মরিচে হাসছে উঠান

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

লাল মরিচে হাসছে উঠান

বগুড়ায় লাল মরিচে হাসছে কৃষকের উঠোন। এবার শীতের সবজিতে ভালো ফলনের পর শুকনো মরিচে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। উঠোন থেকে শুরু করে জমি, খোলা মাঠ, খোলা স্থানে- যেখানে পারছেন মরিচ শুকিয়ে হাটে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মরিচচাষির উঠোন এখন লাল মরিচে লাল হয়ে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পেতে যাচ্ছেন মরিচচাষিরা।  জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ মৌসুমে বগুড়ায় মোট মরিচ চাষ হয়েছিল ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে ১৭ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন মনিচ উৎপন্ন হয়েছে। চলতি বছরও বগুড়ায় মোট মরিচ চাষ হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। সমপরিমাণ জমিতে মরিচ চাষ করে ফলন পাওয়া গেছে ১৭ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো মাঠে ফলন আছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও বেশি ফলন পাওয়া যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন হবে বাম্পার। জানা যায়, সারা দেশে বগুড়ার মরিচের সুনাম রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারত থেকে আমদানি করা মরিচকে বগুড়ার মরিচ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়। বগুড়ার চরাঞ্চলের মরিচের জুড়ি মেলা ভার। তাই মসলা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বগুড়া থেকে মরিচ কেনার জন্য ফড়িয়াদের নিয়োগ করেছে। তারা হাটে হাটে মরিচ সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এদিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার যমুনা নদীর চর এলাকায় মরিচ শুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মরিচ চাষিরা। সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা, আচারের পাড়া, সুজাইতপুর, সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা, তিতপরল, বোহাইল, যমুনা নদীর কয়েক কিলোমিটার বাঁধজুড়ে মরিচ শুকানো হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর পূর্বপাড়ে জেগে ওঠা চরের কৃষকদের কাছে ধানের পরই মরিচ অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার মরিচচাষিরা জানান, বগুড়ায় সারা বছর মরিচের চাষ হলেও অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত যে মরিচ চাষ হয়ে থাকে তা শুকিয়ে বাছাই করা হয়। বছরের অন্য মাসে যে মরিচ উৎপাদন হয় তা সাধারণত কাঁচামরিচ হিসেবে বাজারজাত হয়ে থাকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলার বাওইটোনা চরের মরিচচাষি বাদশা মিয়া জানান, তিনি প্রায় ১৩ বিঘা জমিতে হাইব্রিড মরিচের চাষ করেছেন। চাষের পর জমি হতে কাঁচামরিচ বিক্রির পর এখন শুকনো মরিচ করে শুকিয়ে নিচ্ছেন। মরিচ তোলা শেষ হলে জমিতে পাটের বীজ বপন করবেন। জেলার সারিয়াকান্দি কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলার  ১ হাজার ৭৫০ হেক্টরে হাইব্রিড মরিচ এবং ১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় উফশী মরিচ মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের মরিচচাষি শাহাদত হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বিঘাতে ফলন হয়েছে ৬ মণ শুকনো মরিচ। বিঘাতে তিনি খরচ বাদে ১০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের মরিচচাষি আবদুল মালেক জানান, বগুড়ায় উৎপাদিত মরিচের চাহিদা থাকায় সব সময় দাম থাকে। বাজারে বগুড়ার মরিচ বেশি দামে বিক্রি হয়। এবার ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এখন মরিচ শুকানোর কাজ চলছে। অনেকেই আবার আগাম শুকিয়ে বাজারে বিক্রিও করেছে। বগুড়ার মরিচ ঝাল বেশি বলে সারা দেশে এর চাহিদা আছে।

 শহরের ফতেহ আলী বাজারের ব্যবসায়ী নরেশ সাহা বলেন, বর্তমান বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরে শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। নতুন শুকনো মরিচ বাজারে উঠলে দাম কিছুটা হলেও কমবে। আগামী কয়েক দিন পর শুকনো মরিচ বাজারে বিক্রি শুরু হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ায় বরাবরই মরিচের ভালো ফলন হয়ে থাকে। চাষিরা প্রথমে কাঁচা আকারে বিক্রি করে খরচ তুলে নেয়। পরে শুকনো আকারে বিক্রি করে মরিচের পুরোটাই আয় করেন। বগুড়ায় যে লাল মরিচ চাষ ও বাজারজাত হয় তা অন্যান্য জেলার চেয়ে মানে ভালো। সে কারণে বগুড়ার মরিচের ভালো দাম পান কৃষক। চলতি বছর ১৭ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন ফলন ধরা হলেও এর বেশি ফলন পাওয়া যাবে। মাঠে এখনো ফলন রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর