শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন

সাতক্ষীরার উপকূলীয় আশাশুনি এবং শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও চুনা নদীর প্রবল জোয়ারের কারণে বেড়িবাঁধে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ ও ২ এর আওতায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতোমধ্যে নদীর প্রবল জোয়ারে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি ও দাঁতনেখালি খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে দুর্গাবাটি এবং দাঁতনেখালি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে আশাশুনি উপজেলা সদরের দয়ারঘাট এলাকাসহ মোট ৫টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে মোট ৩টি গ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সহস্রাধিক চিংড়ি ঘের ও ছোট বড় পুকুর ভেসে যায়। কয়েক হাজার বসতবাড়ী ও খাল-বিল এবং ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে আছে। দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ভেঙে যাওয়া এলাকা কপোতাক্ষ নদের দয়ারঘাট স্পটটি বলিভর্তি জিওব্যাগ ফেলে কোনোভাবে গতকাল সংস্কার করা হয়। এ ছাড়া শ্যামনগরের খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি, দাঁতনেখালি বাঁধগুলো জিও ব্যাগ ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করা হলেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় ঠিকাদার। ফলে দিনে কমপক্ষে দু’বার নদীর জোয়ারের লোনা পানি ঢুকছে লোকালয়ে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর তথ্য মতে, আশাশুনি উপজেলাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আওতায় ৭/১, ৭/২ ও পোল্ডার ৪ এর আওতায় মোট ৪২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে স্থানভেদে ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের। গত ২৯ মার্চ কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরম ঝুঁকিতে থাকা আশাশুনি উপজেলা সদরের দয়ারঘাট ও জেলেখালি এলাকা মুহূর্তের মধ্যে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আশাশুনি সদরের খোলপেটুয়া নদীর দয়ারঘাট, জেলেখালী, বলাবাড়ীয়া প্রতাপনগর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, শুভাদাকাটি, হিজরাকুলা ও হরিষখালী, আনুলিয়া ইউনিয়নের মনিপুর, বিছট, খাজরা বাজার ও শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী, গরালি এবং বড়দলের কেয়ারগাঁতি এলাকা। অচিরেই এসব বাঁধ সংস্কার না হলে এই বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই নদীর প্রবল জোয়ারে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হবে লোকালয়ের লাখ লাখ মানুষ। ভেসে যাবে কোটে কোটি টাকার চিংড়ি ঘের। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২এর নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার সরকার জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর ৪ নং পোল্ডারের আওতায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরোদমে বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। নদীর জোয়ারের পানিতে গত মঙ্গলবার ভেঙে যাওয়া দয়ারঘাট বাঁধটি           ইতিমধ্যে সংস্কার করতে সক্ষম হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। দ্রুত গতিতে চলছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। দীর্ঘ মেয়াদি চিরস্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ করার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব ও বরাদ্দ পাস হলে টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। এদিকে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলমও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল ও কলবাড়ী গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর আওতায় ১৫ নম্বর পোল্ডারের অধিনে চারদিকে নদী বেষ্টিত ব-দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরে বেশ কিছু স্পটে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ সংস্কারের কাজ করে। কিন্তু কালিবাড়ী, ট্যাকেরহাট, পাশ্মেমারি, জেলেখালী বেড়িবাঁধ এখনো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। এ ছাড়া বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি, দাঁতনেখালী আজিজ ম্যানেজারের বাড়ি হতে প্রায় ১ কিঃমিটার ও শাহ-আলম গাজীর বাড়ির সামনে  থেকে গাবুরা-বুড়িগোয়ালিনী কলেজ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এবং বুড়িগোয়ালিনী ও আটুলিয়া ইউনিয়নের মাদিয়া ও ভামিয়া এলাকার ১ কিলোমিটার বাঁধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট ক্যাম্পের সামনে থেকে বুড়িগোয়ালিনী বাজার পর্যন্ত এবং মুন্সীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে মৌখালী পর্যন্ত ৩ কি:মিটার বাঁধে ভাঙন ও ব্যাপক ফাটল রয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো সংস্কার করা না হলে সুন্দরবন ঘেঁষা আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার বসবাসরত প্রায় ৬ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। ফলে এখন থেকেই নদী ভাঙন আতংকে রয়েছে দেশের সর্ব দক্ষিণ জনপদের মানুষ। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান পাওবো-১ এর অধীনে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর এ চারটি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ফণি ও আম্পান পরবর্তী ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার বাঁধ সংস্কার করা হয়।

সর্বশেষ খবর