শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

আট বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার শেষ হয়নি আজও

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হলেও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত আট বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটেনি আজও। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকান্ডের বিচার এখনো শেষ হয়নি। উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল হক বলেন নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রফিক উদ্দিন সরকার, শাহজাহান আলী, ডা. আয়নুল হক, এস এম আমজাদ আলী, ঈমান আলী মাস্টার, আক্কাস আলী মাস্টার, রায়হান আলী, আবদুল আজিজ। এসব হত্যাকান্ডের বিচার আজও হয়নি। নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রফিক উদ্দিন সরকারকে বন্দুকের গুলি ও ছুরিকাঘাতে ১৯৮১ সালের ৬ এপ্রিল রাতে নৃশংসভাবে খুন করে দুর্বৃত্তরা। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন সরকার উপজেলার পিওভাগ গ্রামের মরহুম বছির উদ্দিন সরকারের পুত্র, তৎকালীন বড়াইগ্রাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ইতিমধ্যে ৪০ বছর কেটে গেলেও সেই হত্যাকান্ডের বিচার এখনো হয়নি। এর আগে ১৯৭৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার লক্ষ্মীকোল বাজারে নিজ বাড়িতে নিহত হয়েছিলেন ’৭১ সালে থানা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী ও তার বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ঈমান আলী। তারা ছিলেন উপজেলার নগর ইউনিয়নের মেরীগাছা গ্রামের আলহাজ উমেদ আলীর ছেলে। নিহতদ্বয়ের স্বজনরা জানান, রাতে যখন তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন ২৫/৩০ জন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত ঘিরে ফেলে বাড়ি। কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে সেখানে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ঈমান আলীর মাথায় গুলি করে হত্যা করে।

 পরে তারা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলীর ঘরে যায়। তিনি আত্মরক্ষার জন্য খাটের নিচে লুকিয়ে পড়েন। কিন্তু দুর্বৃত্তদের চোখ এড়াতে পারেননি তিনি। দুর্বৃত্তরা তাকে উদ্দেশ্য করে খাটের নিচে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে গুরুতর আহত হন। পরে স্বজনরা বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ঈমান আলীকে মৃত এবং ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গরুর গাড়িতে করে গ্রামের বাড়ি মেরীগাছাতে নিয়ে আসেন।  সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলীর মৃত্যু হয়। এভাবে পেরিয়ে গেছে ৪৬ বছর। বড়াইগ্রাম থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আয়নুল হককে ২০০২ সালের ২৯ মার্চ রাতে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ছিলেন মহিষভাঙ্গা গ্রামের মৃত টিনু কবিরাজের ছেলে। নিহতের স্বজনেরা জানান, এভাবে এ হত্যাকান্ডের ১৮ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের বিচার আজও শেষ হয়নি। উপজেলার দোগাছি গ্রামের মৃত দুরলভ মন্ডলের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলী মাস্টার, মেরীগাছা গ্রামের আলহাজ উমেদ আলীর ছেলে রায়হান আলী, কুজাইল গ্রামের মৃত বেলাল উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে আবদুল আজিজকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রাজাকাররা। নিহতদের স্বজনেরা জানান, ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে ছুটি নিয়ে দেশে ফেরার পথে লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছলে ৭১ সালের ২২ জুলাই ওই এলাকার রাজাকার বাহিনী তাদের আটক করে অজানা স্থানে নিয়ে হত্যা করে। তাদের কোনো  খোঁজ পাওয়া যায়নি আজও। ১৯৭৫ সালের ৩১ জুলাই পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের তৎকালীন আম বাগানে প্লাটুন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আমজাদ আলীকে হত্যা করে অস্ত্রধারী ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত। তিনি উপজেলার থানাইখাড়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে। ঈশ্বরদী থেকে নিজ বাড়ি থানাইখাড়া গ্রামে আসার পথে রাতে পাঁচবাড়ীয়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন। সেখানে তাকে বেধড়ক মারপিট  শেষে কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

সর্বশেষ খবর