শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

রোদে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

রোদে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

এক সপ্তাহ আগেও পিঁয়াজ বীজের খেতে গিয়ে ফলন দেখে চোখ জুড়িয়েছিলেন সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ভাসানচর গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন। ভালো ফলন হবে। আর সেই বীজ বিক্রি করে দেনা শোধ করার পাশাপাশি নতুন কিছু একটা করার স্বপ্ন বুনছিলেন তিনি। কিন্তু  কয়েক দিনের ব্যবধানে সেই পিঁয়াজ দানার খেতটি পুরোটাই নষ্ট হতে বসেছে। প্রচন্ড তাপে পিঁয়াজ বীজের কদম শুকিয়ে তা পড়ে যাচ্ছে। খেতের এমন অবস্থা দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি সোহরাব হোসেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। বিভিন্ন স্থান থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ করে এবার পিঁয়াজ দানার আবাদ করেছিলেন। ২ একর জমিতে লাগানো পিঁয়াজ বীজ থেকে ২৫ মণ দানা পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল তার। কিন্তু পুরো খেতে ২ মণ দানাও পাবেন না তিনি। দিন যত গড়াচ্ছে দানা পরিপক্ব হওয়ার আগেই প্রচন্ড রৌদ্রের তাপে কদমগুলো শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। সোহরাব হোসেনের মতো একই অবস্থা ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার কৃষকের। সবাই এখন সামনের দিনগুলোতে দুঃস্বপ্ন দেখছেন। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন তা নিয়েই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর পিঁয়াজ দানার দাম আশাতীত ভালো পাওয়ায় অনেকেই এবার অধিক জমিতে বীজের আবাদ করেছিলেন। শুরুতে পিঁয়াজের কদম দেখে খুশিতে মন ভরে উঠেছিল তাদের। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন অনেক কৃষক। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়া এবং গত কয়েক দিন ধরে প্রচন্ড খরার কারণে মাঠের পর মাঠ পিঁয়াজ দানার কদমগুলো শুকিয়ে কালো হয়ে ঝরে যাচ্ছে। ফলে কয়েক দিনের ব্যবধানে কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সারা দেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নেই বেশি পিঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। এ এলাকার সিংহভাগ কৃষকই পিঁয়াজ দানার আবাদ করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, পূর্ব ভাসানচর, মধ্য ভাসানচর, পশ্চিম ভাসানচর, চর নশিপুর, ইজা দুর্গাপুর, হাজীডাঙ্গী, চর জ্ঞানদিয়া, খালাসি দুর্গাপুরের সব মাঠের চিত্র একই। মাঠের পর মাঠ পিঁয়াজ দানার খেত প্রচন্ড রৌদ্রের তাপে পুড়ে যাচ্ছে। ভাসানচর এলাকার কৃষক আবদুস সামাদ জানান, তিনি এবার অধিক জমিতে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর সব ফসল বাদ দিয়ে পিঁয়াজ বীজ আবাদেই তিনি টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু এবার তিনি সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। একই অবস্থা সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক কৃষকের। তিনি এ বছর ২৫০ শতাংশ জমিতে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নিয়েছেন। তাদের টাকা পরিশোধ কীভাবে করবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। গোবিন্দপুরের কৃষানি নাজমা বেগম জানান, তিনি একটি ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পিঁয়াজ দানার আবাদ করেছেন। এবার বুঝি তার জায়গা-জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করতে হবে। দেশের মধ্যে পিঁয়াজ বীজের সবচেয়ে বেশি আবাদকারী ও দেশসেরা কৃষানি উপাধি পাওয়া শাহিদা বেগম জানান, মাঠে ফলনের অবস্থা ভালো নয়। তিনি ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পিঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। ফলন বিপর্যয়ের কারণে এবার তিনি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। শাহিদা বেগম জানান, বিগত ৩০ বছরের মধ্যে এবার পিঁয়াজ বীজের আবাদ করে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন কৃষক। সরকার ঋণের সুদ মওকুফসহ প্রণোদনা না দিলে অনেক কৃষক পথে বসবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর