শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

অপরাধের স্বর্গরাজ্য দৌলতদিয়া ঘাট

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

অপরাধের স্বর্গরাজ্য দৌলতদিয়া ঘাট

দেশের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া নদীবন্দর অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। হত্যা, হামলা, ছিনতাই, গাড়ির টিকিটে দালাল চক্রের প্রভাব ও মাদক ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার সাধারণ মানুষসহ নৌরুট ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালকরা। সংশ্লিষ্টদের নজরদারি না থাকায় অপরাধীরা দৌলতদিয়া নৌবন্দর এলাকাকে অপরাধের অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। গত ১৯ মার্চ রাতে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা গনি মন্ডল। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী। হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে আধা ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন পুলিশকে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় দৌলতদিয়া ইউনিয়নে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এসব অপরাধের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতার নাম, আনসার সদস্যসহ আত্মসমর্পণকারী বেশ কয়েকজন চরমপন্থি দলের সদস্যের নাম উঠে এসেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে গড়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। এর মধ্যে ফল ও মাছের ট্রাকগুলো বুকিং দেয় তাদের নিয়োগকৃত এজেন্ট। এই এজেন্টের দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। তাতেই মেলে ফেরির টিকিট। গোয়ালন্দে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার পালাবদলের পর ফল ও মাছের ট্রাকগুলোর পার করার ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার করে একটি গ্রুপ। সেই ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েক দিন উত্তেজনা বিরাজ করছিল দৌলতদিয়া নৌবন্দর এলাকায়। গোয়ালন্দসহ দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আবদুল জব্বার বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ওপর হামলা এবং গণি মন্ডলের ওপর হামলা একই সূত্রে গাঁথা। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা গ্রেফতার না হলে আরও হত্যাকান্ড ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু ফেরিঘাটে আধিপত্য বিস্তার করে অবৈধ অর্থ আদায়ই নয়, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রবেশপথে আবার টিকিট প্রথা চালুর প্রক্রিয়ার জন্য তদবির শুরু করেছে একটি গ্রুপ। টিকিট চালুর পক্রিয়া শুরু করতে ঢাকায় দেনদরবার শুরু হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা। দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আবদুর রহমানের ওপর হামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারের কারণে রাতের অন্ধকারে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের ওপর। অন্যদিকে একই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান গনিকে হত্যা করা হলো সেটি এখনো জানা যায়নি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গোয়ালন্দের চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনা রেশ কাটতে না কাটতেই দৌলতদিয়ার প্যানেল চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যাসহ সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করার। সেই লক্ষ্যে চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আবদুল্লাহ আল তায়েবীর বলেন, অপরাধীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দৌলতদিয়া এলাকায় পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর