মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

পানির দামে ফুল

বকুল মাহবুব, বেনাপোল

পানির দামে ফুল

সকালে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে এক ভ্যান বিভিন্ন জাতের ফুল কিনে বিক্রির জন্য বেরিয়েছেন স্থানীয় শরীফপুর গ্রামের ভ্যানচালক হাসান আলী। দুপুর গড়িয়ে গেলেও বিক্রি হয়নি সব ফুল। শেষ পর্যন্ত বিক্রি হবে কিনা তা জানেন না। ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালির ফুলের বাজার এখন ক্রেতাশূন্য। লকডাউনের কারণে বেনাপোল বা সাতক্ষীরা ছেড়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটে যায়নি কোনো পরিবহন। ফলে অবিক্রীত অবস্থায়  রাস্তার পাশে পড়ে আছে বস্তা বস্তা ফুল। গত শনিবার ফুল বিক্রির জন্য খেত থেকে উঠানো হলেও রবিবার মার্কেট বন্ধ থাকবে শুনে শেষ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকাররা ফুল কিনেনি। ফলে অবিক্রীত থেকে গেছে লাখ টাকার ফুল। গদখালির  কৃষকদের বুকজুড়ে শুরু হয়েছে কষ্টের মাতম। করোনার ভয়াবহতা ঠেকাতে সরকারের দেওয়া সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিনেই চরম ধস নেমেছে ফুলের বাজারে। বিশেষ করে পরিবহন বন্ধ থাকায় ফুলচাষিরা পড়েছেন মহাবিপাকে। পানির চেয়ে কম দর হেঁকেও খদ্দের পাচ্ছেন না ফুলচাষিরা। গতকাল সকালে  গদখালির ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বস্তা বস্তা গোলাপ বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে আছে, সঙ্গে রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের ফুল। ফুলচাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে হাহাকার। রিক্সাভ্যানে ফেরি করেও বিক্রি হচ্ছে না কোনো ফুল। বেলা ১১টার দিকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ১০০ তাজা গোলাপ, সঙ্গে ২০-৩০টা রজনীগন্ধার ফ্রি স্টিক। তারপরও ক্রেতা নেই। নাভারন, বেনাপোল, ঝিকরগাছা, বাগআঁচড়া বাজারে ফেরি করেও ক্রেতা পাচ্ছেন না ফেরিওয়ালা। দোকানপাট বন্ধ থাকায় বাজারে লোকজনের চাপ কম। ফলে ফুলের ক্রেতা নেই বলে জানালেন ফুল বিক্রেতা হাসান। এদিকে গদখালির  ফুল বাজারে শনিবারের চিত্র ছিল আরও খারাপ। বিকালের দিকে ২০ টাকায় বিক্রি  হয়েছে ১০০ গোলাপ।

রজনীগন্ধাসহ অন্যান্য ফুলের কোনো ক্রেতা ছিল না বাজারে। গদখালি গ্রামের ফুলচাষি লিটন জানান, সরকার সাত দিনের লকডাউন দিয়েছে। এই সাত দিনে গোলাপ খেতের অনেক ফুল শুকিয়ে যাবে। লকডাউন যদি কোনো কারণে বেড়ে যায় তাহলে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, এ বছর গ্লাডিওলাস চাষ করা হয়েছে হেক্টর ২৭২ রজনীগন্ধা ১৬৫ এবং গোলাপ ১০৫ হেক্টর গাদা ৫৫ জারবেরা ২২ এবং রথস্টিক ফুলের চাষ করা হয়েছে ৫ হেক্টর জমিতে। ২০১৯ সালে গ্লাডিওলাস বিক্রি হয়েছিল ১১ কোটি ৩৪ লাখ, রজনীগন্ধা ৪ কোটি ৯৬ লাখ এবং গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১২ কোটি টাকার। ফুল চাষিরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফুল চাষ করেছে। ফুলের ন্যায্য দাম না পেলে ব্যাংক ঋণ মেটাতে জমি বিক্রি ছাড়া পথ থাকবে না। গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে চাষিরা এ বছর বেশি জমিতে ফুলের চাষ করেছে। আগামী সাত দিন লকডাউন থাকলে ১ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হবে বলে কৃষিকর্তা জানান। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর