বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

লালমনিরহাটের একমাত্র আঞ্চলিক মহাসড়ক লালমনিরহাট-বুড়িমারী। দুই লেনের এই মহাসড়কটির দুই ধারে দখল হওয়ায় যানবাহন চলাচলে দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিন ছেড়ে যায় প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক। এ ছাড়া যাত্রীবাহী বাস ও কোচ তো রয়েছেই। ফলে দিনে মহাসড়কের চেয়ে রাতের সড়কটি হয়ে উঠে অরক্ষিত। সাধারণ মানুষের চলাচলের কোনো উপায় থাকে না এ সড়কে। সড়কের বেহাল ও প্রশস্ততা কম থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত ৩ মাসে এ সড়কে ঘটেছে ছোট বড় ৩৯টি দুর্ঘটনা। প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এ যেন মহাসড়ক নয়, মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে দিন দিন। মাত্র ১৮ ফিট প্রশস্ত এ মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২২ কিলোমিটার। লম্বা আকৃতির এ মহাসড়কের পাশেই জেলার পাঁচটি উপজেলা অবস্থিত। আন্তর্জাতিক এ মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানে খানাখন্দে ভরপুর। মহাসড়কটিতে রয়েছে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ২১ বাক, ১২টি রেলক্রসিং মহাসড়কের ঘা ঘেঁষা হাটবাজার। এসব বাঁক, রেল ক্রসিং, হাটবাজার এলাকায় প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দিনের বেলায় স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও রাতে অধিক যানবাহন চলাচল করায় সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগী হয়ে উঠে মহাসড়কটি। তবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং দুর্ঘটনা  হ্রাসে দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়লেও কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বাজারগুলোতে হয়েছে অবৈধভাবে ফুটপাথ। দখল ও গড়ে উঠেছে বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা। এসব কারণে ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে মহাসড়কটির বাজার এলাকাগুলো। এ কারণে ঝুঁকি বাড়ছে বাজার এলাকায়। লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগর, মিশন মোড়, আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী, পলাশী থেকে, কালীগঞ্জ উপজেলা অঞ্চল, হাতিবান্ধার পারুলিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় সড়ক অধিক বেহাল থাকায় ঝুঁকি বেড়েছে। এ ছাড়া কিছু কিছু স্থানে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। সাপ্টিবাড়ি এলাকার রব্বানী নামের এক পথচারী বলেন, সড়কটির প্রশস্ততা কম। অগণিত যানবাহন চলাচল করে, এ জন্য দিনের বেলাতেই সড়কে চলতে ভয় লাগে। তবে রাত হলে আরও বেশি ভয় লাগে রাস্তা পারাপারে। আদিতমারীর স্বর্ণমতী ব্রিজ এলাকার এক সাইকেল আরোহী বলেন, দিনের বেলা ট্রাক একটু কম তাই চলাচল করা যায়। রাতে ট্রাক চলাচল করায় বাজার থেকে বাড়ি যেতে খুবই কষ্ট হয়। আর কয়েকদিন পর পর তো ছোট-বড় এক্সিডেন্ট হয়েই থাকে।

ট্রাক চালক শফিকুল বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আমি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল নিয়ে যাতায়াত করে থাকি। এই মহাসড়কটির অনেক স্থানে খানা-খন্দ আছে। এসব স্থানগুলো ঠিক করে দিলেও কিছুদিনের মধ্যে আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় সড়কটি। অপর এক ট্রাকচালক বলেন, সড়কটি খুবই ছোট, দুটো ট্রাক ক্রসিং করতে খুব সমস্যা হয়। সড়কের প্রশস্থতা বাড়ালে ভালো হতো। কাকিনা চাপারতল এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, আমার দোকানের সামনে থেকে কালীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। রোদ হলে ধুলা আর বৃষ্টিতে কাদামাখা থাকে এই জায়গাটুকু। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের লালমনিরহাটে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, তিস্তা সড়ক সেতু থেকে বুড়িমারি স্থলবন্দর পর্যন্ত ২১ বাঁকে সাইন সিগনাল এবং রোড মার্কিং করা হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর সংলগ্ন ১০ কিলোমিটার সড়ক গত অর্থ বছরে প্রশস্তকরণসহ মেরামত করা হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে পলাশী থেকে হাতিবান্ধা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়কের মেরামত কাজ চলমান। এ সড়কের তিনটি বাজার অংশে ঝুঁকি কমাতে কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, সড়কের যে স্থানগুলো দুর্ঘটনা প্রবণতা বেশি সে স্থানে অ্যাডভান্সড সাইন বসানো হচ্ছে। যেন গতি ৪০ কিলোমিটার এর বেশি উঠাতে না পারে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা হয়ে থাকলে পরবর্তীতে যাতে আর ঐ স্থানে দুর্ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য আমরা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তিনি বলেন, চারলেন সড়ক যতদিন না আসবে। ততদিন দুর্ঘটনা শূন্যের নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করে চলাচল করার অনুরোধ করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর