বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

জলাধার সংরক্ষণ আইন আছে, প্রয়োগ নেই

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে জলাধার আইনের তোয়াক্কা না করে পুকুর, খাল, বিল, দীঘি ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। আর জলাধার আইনের প্রয়োগ না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ দখলদার চক্রটি। জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, খাল, লেক ভরাট করা  শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও নিষিদ্ধ। অভিযোগ উঠেছে নাটোর শহরের সরকারি রানীভবানী মহিলা কলেজের পেছনে এ আইন অমান্য হচ্ছে। শহরের কাপুড়িয়া পট্টির এক ব্যক্তি জলাশয় ভরাট করে চারতলা ভবন নির্মাণে নেমেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শহরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। জলাশয়টি ভরাট না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক এবং নাটোর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিভিন্নজন। তবে এ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গেলে চড়াও হন এবং মামলার হুমকি দেন এক ব্যক্তি ও তার ছেলে। এদিকে নাটোর জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ওই জায়গার ওপর ভরাট কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। জানা যায় জেলা শহরের একমাত্র সরকারি রানীভবানী মহিলা কলেজের পেছনে জমিটির অবস্থান। এটি শহরের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। জলাশয়টি সারা বছর পানি ভর্তি থাকে। এটি শহরের নিচা বাজার, চৌধুরী বাড়ি থেকে শুরু হয়ে ছায়াবানী সিনেমা হলের পাশ দিয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে এসে ভূষিখালি জোলার সঙ্গে মিলিত  হয়ে নারদ নদে পানি নিষ্কাশন করছে।

এছাড়া জলাধারের আশপাশে কোনো আগুনের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস এখান থেকে পানি  ব্যবহার করে আগুন নেভাতে সহায়তা পেত। এর বাইরে লিজের মাধ্যমে এই ডোবায় মাছচাষও করা হত। কিন্তু ডোবাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্মাণ কাজের জন্য শুরু করা হয়েছে জলাশয়টি ভরাটকরণ। বিষয়টি দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। জানা যায়, জমিদারি প্রথা চলাকালীন সময়ে শহরের এক ব্যক্তি পুকুর জমিদার আনন্দরায় নারায়নের কাছ থেকে ওই ভূমির পত্তন নেন। পরে ২০০২ সালে জমির মালিকের ওয়ারিশদের কাছ থেকে ক্রয় করেন ভূমির মালিক দাবিকারি এক ব্যক্তি। এরপর ২০০৪ সালে জমি খাজনা খারিজ করেও ফেলেন তিনি। এদিকে শহরের পানি নিষ্কাশনের ৪ ফুট ড্রেনেজ ব্যবস্থা রেখে ওই জলাশয়ের ওপর ৪ তলা আবাসিক ভবন করার লক্ষ্যে পূর্ব-পশ্চিম বাহু বরাবর উত্তর বাহু ২৭২.৫০ বর্গফুট জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা  বলে গত ১৬ মার্চ নাটোর পৌরসভার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন দুই ব্যক্তি। নাটোর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, শহরের ভিতরে হোক বা বাইরে, পানি সংরক্ষণের জায়গাগুলো ভরাট বা বন্ধ না করাই উত্তম। বিশেষ করে শহরের ভিতরে হলে সেটি কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ অগ্নিকান্ডের সময় এসব পুকুর বা খাল থেকে পানি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। নাটোরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। এ ব্যাপারে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি জানান, পৌর কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে এবং ভূমির শ্রেণি তথ্য গোপন করে একটা প্ল্যান করে নেন ওই ব্যক্তি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর ওই প্ল্যান নোটিসের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইতিপূর্বে ওই জায়গার ওপর কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। সোমবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্দেশনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য’র কথামতো শহরের সব পুকুর জলাশয় ভরাট না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ তার অমান্য করলে ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন ও জলাধার আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর