বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

জাটকা নিধনে অসাধু জেলেরা

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর

জাটকা নিধনে অসাধু জেলেরা

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় অভয়াশ্রম চলাকালে জেলেরা অবাধে জাটকা নিধন করে চলেছে। স্থানীয় জেলেদের দাবি বহিরাগতরা এসে এ নদীতে জাটকা ইলিশ নিধন করছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, নদীতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু অসাধু জেলে লোভ সামলাতে না পেরে রাতের আঁধারে জাটকা নিধনে নামছে। সরকার জাটকা রক্ষায় প্রতি বছরের মতো এবারও মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনায় জাটকাসহ সব প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এলাকা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। স্থানীয় জেলেরা নদীতে না নামলেও মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরগুনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জেলেরা প্রতিদিন দলবেঁধে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় অবাধে জাটকা নিধন করছে। স্থানীয় জেলে কামাল দেওয়ান ও ফজলু বেপারী বলেন, অভয়াশ্রম পালনকালে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। অভয়াশ্রম চলাকালে নদীতে মাছ না ধরায় পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছি। অভিযানকালে ৪০ কেজি খাদ্য সহায়তা, নগদ অর্থ বৃদ্ধি ও বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি করেন। মৎস্য ব্যবসায়ী হযরত আলী বেপারী জানান, মাছঘাটে মূলত ইলিশ ও নদীর মাছ বেশি বিক্রয় হয়। নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মাছঘাট এখন ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে। মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত বলেন, আমরা সচেতন ব্যবসায়ী। তাই সরকারি আদেশ সবসময় মেনে চলি। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস আড়তে নদীর মাছ বিক্রয় করি না। শুধু চাষের চিংড়ি, রুই, কাতল, মৃগেল বিক্রয় করে থাকি। চাঁদপুর মাছঘাটে ২৮৭ জনের মধ্যে বর্তমানে ১৩১ জন আড়তদার রয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে অভয়াশ্রম চলাকালে জাটকা মাছ     বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার         ঘোষণা রয়েছে।

চাঁদপুর জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট সেলিনা আক্তার বলেন, মৎস্য অফিস ও নৌ-পুলিশের সহায়তায় জাল, নৌকা জব্দ এবং আটক জেলেদের কারাদন্ড ও জরিমানা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাটকা ইলিশ রক্ষায় এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, জেলেদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি অভয়াশ্রমে জাল ফেলা বন্ধ করতে প্রচার-প্রচারণা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল হওয়ায় মৌসুমে ইলিশের প্রাচুর্য ছিল। আমাদের জেলেরাই মৌসুমে এ ইলিশ শিকার করে লাভবান হবেন। চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণে ৫১ হাজার ১৯০ জন জাটকা জেলে রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার এ পর্যন্ত ২৯৩টি অভিযানে আইন অমান্যকারী আটক ১৭১ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন জাটকা ও ৫৪ লাখ মিটার কারেন্ট জাল। জাটকা রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্যে মৎস্য আইনে ২ বছরের কারাদন্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর