শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

১৫০ কোটি টাকার শুঁটকি নিয়ে শঙ্কা

বড় লোকসান গুনতে হতে পারে ব্যবসায়ীদের

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

১৫০ কোটি টাকার শুঁটকি নিয়ে শঙ্কা

আশুগঞ্জের লালপুরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার কাজে ব্যস্ত শ্রমিক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর শুঁটকি পল্লীতে। এ পল্লী থেকে বছরে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি বাজারজাত করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে গেল বছর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা না হওয়ায় স্টক করা শুঁটকি নষ্ট হয়ে অন্তত ১২ কোটি টাকার লোকসান হয় ব্যবসায়ীদের। যদিও মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে গত ডিসেম্বর মাস থেকে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল লালপুর শুঁটকি পল্লী। চলতি বছর বিক্রির জন্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকার শুঁটকি স্টক করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আবারও করোনার সংক্রমণ হার ঊর্ধ্বগতির ফলে শঙ্কায় পড়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। যদি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে টানা লকডাউন দেওয়া হয় তাহলে এবার আরও বড় লোকসানে পড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুঁটকির ক্রেতা মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। আর করোনাভাইরাসের কারণে এই দুই শ্রেণির মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে করোনাকালে শুঁটকি ব্যবসাও মন্দা ছিল। কিন্তু করোনার ধকল কাটিয়ে গত ডিসেম্বর মাস থেকে আবারও চাঙা হয়ে উঠেছিল শুঁটকি ব্যবসা। চলতি বছর বিক্রির জন্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকার শুঁটকি স্টক করেছেন লালপুর শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, শত বছর ধরে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের লালপুর গ্রামটিতে শুঁটকি তৈরি হওয়ায় গ্রামটিকে এখন শুঁটকি পল্লী হিসেবে চেনেন সবাই। এ পল্লীর কয়েকশ পরিবার শুঁটকি তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। লালপুর শুঁটকি পল্লীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ৩০০। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ এনে প্রক্রিয়াজাত করে শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। শুঁটকিগুলো গ্রামের মেঘনা নদীর পাশে মাচায় শুকানো হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাতকরণের পাশাপাশি ভারতেও রপ্তানি হয় লালপুরের শুঁটকি। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরির কর্মযজ্ঞ চলে শুঁটকি পল্লীতে। এ সময় শুঁটকি তৈরি করে বেচাকেনার পাশাপাশি স্টকও করা হয়। পরবর্তীতে স্টক করা শুঁটকিগুলো এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর পাইকাররা শুঁটকি না নেওয়ায় ব্যবসায়ীদের গুদামে স্টক করে রাখা বেশির ভাগ শুঁটকি নষ্ট হয়ে যায়। এতে লোকসানের মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। অনেকে পুঁজি সংকটে পড়েন। লালপুর শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী সুকমল চন্দ্র দাস বলেন, বছরে ১ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শুঁটকি বিক্রি করতে পারি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে শুঁটকি নিয়ে যান। করোনার কারণে স্টক করা শুঁটকি নষ্ট হয়ে ৪-৫ লাখ টাকার লোকসান হয়। গত জানুয়ারি মাস থেকে শুঁটকি বেচাকেনা শুরু হয়েছিল। ফের করোনার প্রকোপ বাড়ায় স্টক করা শুঁটকি নিয়ে শঙ্কায় আছি। শুঁটকি ব্যবসায়ী নিখিল দাস বলেন, করোনাভাইরাসের সময় বেচাকেনা না হওয়ায় গুদামে স্টক করে রাখা গত বছরের অধিকাংশ শুঁটকি নষ্ট হয়ে যায়। সব ব্যবসায়ীদেরই লোকসান গুনতে হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অন্তত দেড়শ কোটি টাকার শুঁটকি স্টক করেছিলাম। শুঁটকিগুলো বিক্রি করতে পারলে আমরা গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব বলে মনে করেছিলাম।

সর্বশেষ খবর