শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘরে ঘরে পিঁয়াজ, দাম নিয়ে হতাশা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ঘরে ঘরে পিঁয়াজ, দাম নিয়ে হতাশা

পিঁয়াজের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুর জেলার মাঠে মাঠে চলছে এখন নতুন পিঁয়াজ উত্তোলন। দুচোখ যেদিকে যায় শুধুই দেখা যাচ্ছে হাজারো কৃষক-কৃষানী পিঁয়াজ তুলছেন। এ বছর পিঁয়াজের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকটা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকরা। ভালো ও উন্নত জাতের পিঁয়াজ উৎপাদনে বেশ সুনাম রয়েছে ফরিদপুর জেলার। ফলে জেলায় দিন দিন বেড়েই চলেছে পিঁয়াজের আবাদ। এ বছর পিঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ৯৭ হেক্টর। কিন্তু গত বছর পিঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করেছেন শত শত চাষি। এ জেলায় মুড়িকাটা, দানা এবং হালি পিঁয়জের আবাদ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে জেলার নগরকান্দা, সালথা ও ভাঙ্গা উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকরা হালি পিঁয়াজ ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এ জেলার উৎপাদিত পিঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। তবে পিঁয়াজ রোপণ মৌসুমের শুরুতে পিঁয়াজ বীজের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর উৎপাদন খরচও হয়েছে অনেক। আর বাজারে পিঁয়াজের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকটা দুঃশ্চিন্তায় কৃষকরা। ফয়সাল হোসেন নামের এক কৃষক জানান, তিনি গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করেছেন। এ বছর আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। তবে পিঁয়াজ বীজ, সার, কীটনাশক এবং বোনার সময় সেচ ও কামলার বেশি দাম থাকায় উৎপাদন খরচও বেশি হয়েছে। কিন্তু বাজারে এখন পিঁয়াজের তেমন একটা দাম নেই। গত বছর যেখানে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। এবার তা ২০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আরেক কৃষক ছমির মাতুব্বর বলেন, বাজারে পিঁয়াজের দাম না থাকায় এবার তাদের লোকসান গুনতে হবে। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে এ বছর পিঁয়াজ বিক্রি করে লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের। পিঁয়াজ মৌসুমে ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানি করার কারণে সঠিক দাম না পাওয়ার একমাত্র কারণ হিসেবে দেখছেন কৃষকরা। নগরকান্দার বেশ কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, গত বছর পিঁয়াজের দাম ছিল চড়া। কিন্তু এ বছর দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। যেখানে প্রতি কেজি পিঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। সেখানে পিঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর আর তারা পিঁয়াজ আবাদ করবেন না বলে জানিয়েছেন।

পিঁয়াজ মৌসুমে কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সরকার যদি বিদেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি না করে তবে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে মনে করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. হযরত আলী বলেন, আগামীতে পিঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানি বন্ধ করতে হবে। ফরিদপুর জেলায় এ বছর ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন পিঁয়াজ উৎপাদিত হবে।

সর্বশেষ খবর