রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

৫ হাজার রিকশা-অটোচালকের মানবেতর জীবন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

৫ হাজার রিকশা-অটোচালকের মানবেতর জীবন

সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনে কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কুষ্টিয়া শহরের ৫ হাজার রিকশা ও অটোচালক। টানা লকডাউনে যানবাহন নিয়ে বাইরে বের হতে না পারায় প্রান্তিক আয়ের এসব মানুষের পরিবারে দুর্দিন নেমে এসেছে। সরকারি বা বেসরকারিভাবে তাদের সাহায্য সহযোগিতাও করা হচ্ছে না। পৌরসভায় নিবন্ধিত রিকশা ও অটোর (ইজি বাইক) সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এ ছাড়া প্রতিদিন পৌর এলাকার বাইরে থেকে অন্তত ২ হাজার রিকশা ও অটোচালক তাদের যানবাহন নিয়ে শহরে আসেন কাজের সন্ধানে। এসব রিকশা ও অটোচালকের ওপর নির্ভরশীল তাদের পরিবারের কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ। চলতি মাসে দুই দফার লকডাউনে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া এসব মানুষ। প্রথম দফার লকডাউনে কিছু কিছু রিকশা ও অটো শহরের সড়কে চললেও দ্বিতীয় দফার লকডাউনে ১০ ভাগও চলছে না। সড়কে বের হলে অনেককেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রোষানলে পড়তে হচ্ছে। লকডাউনের মধ্যে সড়কে নামায় গত কয়েকদিন বেশ কিছু রিকশা ও অটো আটক করে পুলিশ। ৪৮ ঘণ্টা আটকে রাখার পর এসব বাহন ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শহরের বাইরে থেকে কোনো লোক শহরে আসতে পারছে না। আবার শহরের অধিকাংশ দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শহরে লোক সমাগম একেবারেই কম। ফলে যেসব চালক ভয় উপেক্ষা করে সড়কে নামছে, তারাও তেমন ভাড়া পাচ্ছেন না।

 শহরের সুখনগর বস্তির বাসিন্দা আবদুল মন্ডল ব্যাটারি চালিত রিকশা চালান শহরে। তিনি বলেন, তিন ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। এই রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তাতেই কোনো মতে চলে সংসার। কিন্তু আজ এক সপ্তাহ হতে চলল রিকশা নিয়ে সড়কে নামতে পারেননি তিনি। এখন পরিবারের সদস্যদের মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দেবেন কীভাবে- তা ভেবে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না আবদুল কুদ্দুস মন্ডল। শহরের রাজার হাট এলাকায় একটি সরু গলির মুখে ভাড়ার আশায় ঠাঁই বসে রিকশাচালক উজির আলী। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ধততি পারে জাইনেও সড়কে নামিচি। কী করব বাবা পেট তো মানে না। দুই ঘুণ্টা বইসে থাইকেও ভাড়া পাচ্চিনি। দুই শ ট্যাকা তো ভাড়া মাত্তি হবি না হলি আজ না খাইয়ে থাকা লাগবি। অটো চালক আলিম শেখ বলেন, শহরে কত চার চাকার গাড়ি চলছে। কিন্তু পুলিশ তাদের কিছু বলছে না। পুলিশ আইনের কথা শোনায়। কিন্তু আইন কেবল তাদের মতো গরিব রিকশাচালকদের জন্য। তিনি বলেন, কেউ তো তাদের এক কেজি চাল দিয়ে সাহায্য করছে না, কেবল আইন দেখাচ্ছে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে লকডাউন অবশ্যই প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের রুটি রুজির কথাও মাথায় রাখতে হবে। তারা যাতে কাজ বন্ধ থাকলেও দুই বেলা দুমুঠো খেতে পায় সেদিকে সরকারের নজর দিতে হবে। না হলে সামাজিক বিপর্যয় দেখা দেবে।

সর্বশেষ খবর