সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ভুতুড়ে করোনা ইউনিট!

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

ভুতুড়ে করোনা ইউনিট!

সারা দেশে যখন করোনা রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালে তখন নেত্রকোনায় বিরাজ করছে ভুতুড়ে অবস্থা। ১০০ শয্যার আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালটিতে অব্যবস্থাপনায় করোনা ইউনিটটি পড়ে আছে তালাবদ্ধ অপরিছন্ন পরিবেশে। জনস্বাস্থ্যের দেওয়া হাত ধোয়ার বেসিনটি যেন বাৎসরিক ময়লার ভাগাড়। ডিসি এবং মেয়রসহ প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্ত বাড়লেও এখানে ভর্তি হয়নি একজন রোগীও। শুধু তাই নয় হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে পুরো স্বাস্থ্যসেবার বেহাল অবস্থাও। ডাক্তারসহ মেডিসিন এবং পরীক্ষার ডায়াগনোসিসের অভাব রয়েছে অকল্পনীয়। লকডাউনে কষ্ট করে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত রোগীরা এসেও পাচ্ছেন না কাক্সিক্ষত সেবা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে বাইরে থেকেই। নেই ঔষধ। হাসপাতালের সাধারণ রোগী ও স্বজনরা বেডে বসেও পড়ছেন না মুখে মাস্ক। জানা গেছে, গত বছর থেকেই হাসপাতালটিতে চালু হয়েছে করোনা ইউনিট। সরকারি হিসাব মতে জেলা সদরে ৩৬টি বেড রাখা আছে। এসব ওয়ার্ডে মাত্র তিনটি পালস্ অক্সিমিটার আর ১১টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর রয়েছে বলে কাগজে কলমে আছে। অথচ দেখা যায়, করোনা ইউনিটের সিঁড়িতেই আটকানো পুরনো জিনিসপত্রে। ওখানে শুয়ে থাকেন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। সেদিক দিয়ে বন্ধ রয়েছে অন্য রোগীদের চলাচলও। বিল্ডিংয়ের ছাদের পলেস্তরায় যেন পুরোনো দিনের ভুতুরে বাড়ির সবুজাভ রঙ। লিখা ভিআইপিসহ নানা ওয়ার্ডে তালা ঝুলানো।

যেন যুদ্ধের সময় ছেড়ে যাওয়া কোনো বাড়ি। এদিকে নিচে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের করা হাত ধোয়ার বেসিনেও যেন গত বছরের ময়লা জমা। কাছে গেলেই বমি আসবে। জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমানের এক বার্তায় জানা গেছে, জেলায় শুরু থেকে গত ১৭ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত ৯৯৬ জন। সুস্থ রোগী ৮৭৯ জন। মারা গেছেন ১৮ জন। ময়মনসিংহে নমুনা প্রেরণ ১৪ হাজার ১৫৫ জনের মধ্যে রিপোর্ট প্রাপ্ত ১৩ হাজার ৯২৩ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৯৯ জন। কভিড হাসপাতালে ভর্তি ৫ জন। প্রথম ডোজে ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ৫৬ হাজার ৮০২ জন। দ্বিতীয় ডোজে ১২ হাজার ৬৬১ জন। জেলায় মোট প্রাপ্ত ভ্যাকসিনের সংখ্যা ৯৪০০০। তার মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৬৫ হাজার ৯৬২ জন। সার্বিক বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন পেয়েই মিটিংসহ জনসচেতনতা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন জেলার সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া। মাইকিংও করে যাচ্ছেন তারা। বাজারগুলো নিয়ে ভাবছেন। করোনা ইউনিট আছে। সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছেন তারা। কিন্তু কোনো রোগী নেত্রকোনা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। জেলার অবস্থা অন্য এলাকার চেয়ে ভালো দাবি করে তিনি বলেন কিছু সংকট রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ আইসিইউএর। কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। তবে যা আছে তারা তা দিয়েই সেবা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কি আছে পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মাছিও জায়গা নিচ্ছে না ওই ইউনিটে। রোগী তো দূরের কথা। অন্যান্য সাধারণ রোগীদেরও ভোগান্তি চরমে। হাসপাতালে এনেস্থেসিস নেই। নেই ডায়াগনোসিস। ৫০ শয্যার জনবল তাও কম দিয়ে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল। সব কিছুই রোগীদের বাইরে থেকে করাতে হয়। ফুসফুসে পানি আসা প্রায় একমাস ধরে ভর্তি এক বৃদ্ধ হাসপাতালের চত্বরেই ঔষধ কিনতে টাকা চাইছেন আগত যেকোনো মানুষের কাছে। পাশাপাশি করোনায় নমুনা পরীক্ষা দিলে ময়মনসিংহ থেকে রিপোর্ট আসে কয়েকদিন পরে। কখনো বা আসেই না। সব মিলিয়ে নামেমাত্র আধুনিক হাসপাতালটিতে বাস্তবে গেলে পরিত্যক্ত ভবন। মারামারিসহ একেবারে কিছু অসহায় মানুষদের ছাড়া অন্যরা যান না চিকিৎসা নিতে। ইতিমধ্যে পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসক পরিবারসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহে চিকিৎসা নিয়েছেন। সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে জেলাবাসী চান, আর কাগজে কলমে নয়, কথায়ও নয় এবার অন্তত মানুষের উপযোগী করে গড়ে তোলা হোক জেলা সদর হাসপাতালটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর