সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনাযোদ্ধা কাউন্সিলর খোরশেদকে তুলে নিয়ে বিয়ের চেষ্টা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

করোনাযোদ্ধা কাউন্সিলর খোরশেদকে তুলে নিয়ে বিয়ের চেষ্টা

করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ দাফন ও সৎকার করে আলোচিত নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ স্বস্ত্রীক ফেসবুক লাইভে এসে নিজের ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ ফেসবুকে পরিচিত হওয়া এক নারীর দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়। ব্ল্যাকমেইল করে তাকে বিয়ের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। শনিবার রাতে ফেসবুকে লাইভে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান কাউন্সিলর খোরশেদ। এসময় পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। লাইভের শেষের দিকে তিনিও কথা বলেন এবং তার স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন রাষ্ট্রের কাছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৯৩তম করোনা মৃতদেহ দাফন করেন কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার টিমের সদস্যরা। এছাড়াও টিম খোরশেদ ৩৩০ জনকে অক্সিজেন সাপোর্ট, রোগীর দেখেশোনা করা, ৯৮ তম বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে করোনা সংক্রামণ রোধে জীবাণুুনাশক স্প্রে বিতরণ, খাদ্য সহায়তা, টেলিমেডিসিন সেবা ইত্যাদি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। লাইভে জানানো হয়, সাইদা শিউলি নামে এই নারী এক ভয়ঙ্কর চরিত্রের অধিকারী। তার সঙ্গে প্রশাসন ও উচ্চ মহলের বিভিন্ন দফতরের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের চলাফেরা। সে একজন ব্যবসায়ী এবং তিনবার বিয়ে করেছেন। এই নারীর দুই সন্তান রয়েছে যারা ভার্সিটিতে পড়ে এবং এক মেয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে খোরশেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, আমি করোনার শুরু থেকেই করোনায় আক্রান্তদের সেবা প্রদান করি ও সম্মুখে থেকে লড়াই করি, দাফন সৎকার করি। এক পর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এসময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে এক পর্যায়ে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়। তখনি মনে হয় অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেব বিনামূল্যে। এসময় অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে একটি সংবাদের নিচে এ মহিলা কমেন্ট করে সে অক্সিজেন দিতে চায়। আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়। তখন থেকেই সে আমার সঙ্গে ফেসবুকে কানেকটেড হয়। কথা বলা শুরু করে।

এক পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন। আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং বোঝাই। তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এরকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না। বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে সে আরও ক্ষুব্ধ হয়। আমার পেছনে উঠেপড়ে লাগে। তারপর আমার স্ত্রীকেও বুঝিয়ে বলি, আমার স্ত্রীও বলে যে সে আমার সঙ্গে দুষ্টুমি করছে হয়তো। এরপর একবার সে আমাকে বিয়ে করবে ঠিক করে গাড়ি নিয়ে কাজী নিয়ে আমার বাড়িতে আসে আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। পরে আমার স্ত্রী ও লোকজন তাকে আটকায়। সে আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ সবার কাছে গেছে তবে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ যে সবাই তার কূটকৌশল বুঝতে পেরে তাকে অবজ্ঞা করেছে। তিনি বলেন, সম্মানকে ভয় পাই বলেই এতদিন মুখ খুলিনি। আমি ধৈর্য ধরেছি কারণ আল্লাহ হয়তো একটি ফয়সালা করবেন। তবে দুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে এ সংক্রান্ত নিউজ হওয়ায় আমি নিজেই বিষয়টি সবার কাছে বলতে এসেছি। তিনি আরও বলেন, ২১ জানুয়ারির পর থেকে হোয়াটস অ্যাপে, ম্যাসেঞ্জারে, টেলিফোনে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। হত্যার হুমকি জানাচ্ছে মহিলা। আমার পরিবারের সবাইকে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার করছেন। সর্বশেষ আমার স্ত্রী ও সন্তান নকিবকে তুলে নিয়ে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়। আমি এসব ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি সংশ্লিষ্ট সব দফতর ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং অবহিত করেছি। কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি গত ৩ মার্চ ফতুল্লা থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছি। কিন্তু কোনো উপকার পাইনি।’ ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাউন্সিলর খোরশেদ একটি জিডি করেছেন। এটির তদন্ত চলছে। তাই কিছু বলা যাচ্ছে না।’ নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কোনো কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর