বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

মহামারী করোনায় লকডাউনের জন্য একদিকে মানুষ ঘরমুখী হলেও অপরদিকে চৈত্রের প্রখর দাবদাহে কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে যাচ্ছে মাঠে মাঠে। বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টিসহ নানা ধরনের দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের কৃষকরা। গত কয়েকদিন ধরে চলছে রৌদ্রের প্রখরতা। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দির বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা  গেছে কৃষকদের নানা ধরনের ফসল পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য। যে সব কৃষকের শ্যালো মেশিন রয়েছে তারা  মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে ফসলগুলোর জীবন  কোনোমতে বেঁচে রেখেছেন। যেসব জমিতে পানি  দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই সেসব জমির ফসলগুলো পুড়ে যাচ্ছে। সারিয়াকান্দি সদরের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, আমার জমিগুলো যমুনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় জমিতে আগাম পাট বপন করতে হয়। এ বছর আগাম পাট বপন করার পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো বৃষ্টির দেখা পাইনি। অনাবৃষ্টির কারণে আর রৌদ্রের প্রখর তাপে প্রায় সব পাটই পুড়ে যাচ্ছে। উপজেলার কাজলা বাওইটোনা চরের চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, আমি এ বছর কয়েক বিঘা জমিতে চিনাবাদাম লাগিয়েছি। কয়েকদিনের প্রখর রোদে আমার  বেশিরভাগ চিনাবাদামই পুড়ে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে জমিতে কৃষকরা পাটবীজ বপন করতে পারেননি। তবে শ্যালো  মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে কিছু জমিতে পাটবীজ বপন করা হয়েছে। জমিতে পর্যাপ্ত রস আর খরা একসঙ্গে থাকলে পাটের ফলন ভালোই হবে। এ বছর খরার কারণে কিছু জমির পাট নষ্ট হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুদরত আলী জানান, সারিয়াকান্দিতে সর্বমোট ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে। তবে কৃষক বোরোধান  কেটে জমিতে পাটবীজ বপন করবেন। যমুনা এবং বাঙালী নদী বিধৌত সারিয়াকান্দি পাটচাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে পাটের উৎপাদন খরচ খুবই কম। অপরদিকে উৎপাদনের পরিমাণ খুবই বেশি। তাই বগুড়া জেলার মধ্যে সারিয়াকান্দিতে পাটচাষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সোনালি আঁশ পাট এ বছর কৃষকদের সোনার মূল্যই দিয়েছে। প্রতি মণ পাট এখনো বাজারে ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চড়াদামের কারণে কৃষকরা পিঁয়াজ, কাউন, খেরাছী (চিনা), মিষ্টিকুমড়া, মরিচ, ভুট্টা প্রভৃতি ফসল কর্তন করে জমিতে পাটবীজ বপন করছেন। শ্রাবণ ভাদ্র মাসে পাট কর্তনের আশা থাকলেও কয়েকদিনের প্রখর  রোদ সেই আশায় মরীচীকা ধরে দিয়েছে। পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর