মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন ধানে আশার আলো

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

নতুন ধানে আশার আলো

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই আটটি জেলায় রয়েছে হাওরাঞ্চল। যেখানে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমি আছে। যা দেশের মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় সাত ভাগ।

জানা যায়, প্রায় ২০ লাখ কৃষক ও সাধারণ মানুষ হাওর অঞ্চলের বাসিন্দা। অন্যান্য অঞ্চল থেকে এদের জীবনযাত্রাও ভিন্ন প্রকৃতির। এখানকার কৃষি ব্যবস্থাও অন্যান্য অঞ্চল থেকেও ভিন্নতর। কিন্তু প্রতি বছরই বোরো মৌসুমে হাওরসহ ময়মনসিংহ অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা ও ঝড়বৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রায় বিস্তীর্ণ জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ জন্য সাধারণত দায়ী করা হয় আকস্মিক বন্যা ও ঝড়বৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রাকে। এবার আশার কথা শুনিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষকরা। গবেষক দল বলছে, জমিতে স্বল্প জীবনকালীন উচ্চফলনশীল নাবি জাত ‘বিনাধান-১৪’ এবং আগাম জাত ‘বিনাধান-১৬’ আবাদ করলে চিটা হওয়ার আশঙ্কা নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষা পাবে সেই সঙ্গে বোরো ধানের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়াও এই দুটি জাত সারা দেশে বোরো মৌসুমে আবাদ করার উজ্জ্বল সম্ভাবনাও রয়েছে বলে গবেষক দল প্রমাণ পেয়েছেন। বিনার পরিচালক  ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, বিনাধান-১৪ বোরো মৌসুমে নাবিতে আবাদযোগ্য একটি উচ্চফলনশীল ধানের জাত। এটি পরাগায়ণের সময় ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের চেয়েও বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এই ধানের জীবনকাল ১১০ দিন থেকে ১১৫ দিন। একর প্রতি ৭০ মণ ফলন পাওয়া যায়। উচ্চ তাপদাহ মোকাবিলায় বিনাধান-১৪ একটি উপযোগী জাত এবং সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। ইনস্টিটিউটটির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুন্নাহার বেগম জানান, বিনাধান-১৬ একটি স্বল্প জীবনকালীন ধানের জাত। বোরো মৌসুমে ১২৫ থেকে ১২৭ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। কিন্তু অন্যান্য বোরো ধান কাটতে ১৫০ থেকে ১৫৫ দিন সময় লাগে। এদিক থেকে বিনাধান-১৬ উচ্চফলনশীল ও আগাম জাতের। বিনার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্পের পরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম জানান, সরিষা ও আলু জাতীয় ফসলের পর বিনাধান-১৪ নাবিতে চাষ করা যায়। এই জাতগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এক ফসলি জমিতে দুই ফসল, দুই ফসলি জমিতে তিন ফসল আবাদ করা যায়। মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, নতুন দুই জাত আবাদ করলে হেক্টরপ্রতি সাড়ে সাত টন থেকে সাড়ে ৯ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

অধিক ফলনের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী বোরো মৌসুমে এসব ধান একদম প্রান্তিক চাষি পর্যায়ে আবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর