বুধবার, ৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শুকিয়ে গেছে মহানন্দা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

শুকিয়ে গেছে মহানন্দা

পানি সংকটে শুকিয়ে যাচ্ছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদী। নেপালের দক্ষিণ-পশ্চিম হিমালয় থেকে উৎপত্তি হওয়া এ নদী জেলার ভোলাহাট উপজেলার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে গোমস্তাপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হয়ে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে মহানন্দার দৈর্ঘ্য ৯৬ কিলোমিটার। তবে বিশালতার মহানন্দা দিনে দিনে নানা কারণে হারিয়েছে তার গৌরব। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে মহানন্দা নদী শুকিয়ে গেছে। এতে করে জীববৈচিত্র্য রয়েছে হুমকির মুখে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা, পাগলা ও পুনর্ভবা নদী শুকিয়ে বিশাল চর জেগে ওঠায় সেচ সুবিধা এখন হুমকির মুখে। এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ৪৮ কিলোমিটার, পাগলার দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার ও পুনর্ভবা নদীর দৈর্ঘ্য ১১.৫ কিলোমিটার। হিমালয়ের পাদদেশে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পলি মাটি উজান থেকে আসে। অপরদিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাংখা পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজ। স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় ভরাট হয়ে এ নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। মহানন্দা নদীতে এখন হাঁটু পানি রয়েছে। কোথাও আবার পানির অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে মহানন্দার চিত্রই এটি। জানা গেছে, মহানন্দা নদী বাংলাদেশে গঙ্গার একমাত্র উপনদী। নেপালের দক্ষিণ-পশ্চিম হিমালয় থেকে উদ্ভূত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কার্সিয়াং ও শিলিগুড়ি অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ণিয়া ও মালদহ জেলার মধ্য দিয়ে দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে ভোলাহাটের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।  বাংলাদেশ সীমায় প্রবেশের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরকে বাম তীরে রেখে গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কিমি। জানা যায়, মহানন্দা একসময় একটি প্রশস্ত এবং গভীর নদী ছিল। যার বুকে চলাচল করত বড় বড় মালবাহী নৌকা। চলার পথে এই নদী কোনো উপনদী গ্রহণ করেনি। কিংবা এর থেকে কোনো শাখাও বেরিয়ে যায়নি। বৃষ্টির পানি এই নদীর প্রবাহের প্রধান উৎস। ফলে গরম কাল ও শীতকালে নদীর পানি কমে যায়। বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কুল ছাপিয়ে বন্যা হয়ে থাকে। তবে এখন নদী শুকিয়ে যেমন নাব্যতা হারিয়েছে। তেমনই নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের মাছ, নানা মেরুদন্ডী প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ। এছাড়া অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পদ্মা, পাগলা ও পুনর্ভবা নদী। মানুষের জীবন-জীবিকা এবং পরিবেশের উপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এদিকে শুষ্ক মৌসুমে মহানন্দায় পানি না থাকায় জেগে ওঠা নদীর বক্ষে অনেকে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছে। বর্তমানে এ অবস্থা বিরাজমান থাকলেও এখন পর্যন্ত মহানন্দা নদী খননের কাজ শুরু হয়নি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত মহানন্দা নদীতে রাবার-ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প আজ অবধি আলোর মুখ দেখেনি। নদীর পানি অস্বাভাবিক হ্রাস পাওয়ায় দেশি প্রজাতির মিঠা মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নদী খনন করে মাছের উৎপাদন, সেচ-সুবিধাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের যুগান্তকারী পরিবর্তনে সচেষ্ট হবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তন ও বার্ষিক বৃষ্টির হার কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে জেলার ৩টি নদীতে পানি না থাকায় সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে প্রায় ৫৫-৬০ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে।

 বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে গোমস্তাপুর উপজেলার কোনো কোনো স্থানে ১৪০, নাচোল ১২০ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ঝিলিমে ১০০ ফুট পানির স্তর নেমে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর