শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বগুড়ার হাতুড়ি বাটাল এখন মেড ইন বাংলাদেশ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার হাতুড়ি বাটাল এখন মেড ইন বাংলাদেশ

কাকডাকা ভোরে টুং টাং আর ধপাধপ শব্দ দিয়ে শুরু হয়। এরপর চলতেই থাকে মধ্যরাত অবধি। শত বছর ধরে এভাবেই চলছে কর্মকারদের কর্মের শব্দ। তাদের শব্দ যত দ্রুত আর বেশি চলে বুঝে নিতে হয় তাদের আয়ের পথ ততটায় প্রসারিত হচ্ছে। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের কামারবাড়ির কর্মকারদের মেধা আর শ্রমে তৈরি হাতুড়ি, বাটাল, আকর, কর্ণি, বাইশলার নামডাক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সোনাতলার নিভৃত পল্লীতে তৈরি পণ্যগুলো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নামে বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে। বিক্রীত আয় দিয়ে চলছে শত শত পরিবার। জেলার সোনাতলা উপজেলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের কামারবাড়ির এলাকা ঘুরে জানা যায়, কবে কখন এই এলাকায় কামারবাড়ি গড়ে উঠে তার সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। কর্মকাররা বলছেন, তারা পৈতৃকভাবে এই ব্যবসা পেয়ে এসেছেন। যুবক কর্মকাররা বলছেন, তাদের দাদুরা এই কামারশালায় তাদের দাদুর কাছ থেকে কাজ শিখেছেন। বর্তমানে কামারপাড়ায় ঢুকলেই দেখা যাবে হাপড়ের ধপাধপ ওঠানামা শব্দ। আগুনের শব্দ। আরও এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে গনগনে আগুন থেকে তোলা লোহায় অবিরাম পিটিয়ে আকৃতি দেওয়ার দৃশ্য। আবার কোথাও আকৃতি দেওয়ার পর বাঁকাকে সোজা করতে চলছে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানোর কাজ চলছে। সেখানে চলছে টুং টাং শব্দ। যুগ যুগ ধরে এই এলাকায় কাজ করছেন কর্মকার সম্প্রদায়। এ গ্রামের কামারশালার ইতিহাস প্রায় শত বছরের। কামাররা আগুনে লোহা পুড়ে লোহার যাবতীয় তৈজসপত্র তৈরি করে থাকেন। আর সাম্প্রতিক সময়ে এখানে তৈরি মানসম্পন্ন হাতুড়, বাটাল, আকর, কর্ণি, বাইশলা দেশের মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন। শত বছর ধরে এই ব্যবসা এখন দেশে পরিচিতি পেয়েছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নামে। সারা দেশের মানুষ সোনাতলার লৌহজাত এ পণ্যগুলোকে এক নামে চেনেন। সোনাতলায় তৈরি লোহার এ পণ্যগুলোই গোটা দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে।

এ ছাড়াও অনেক মালিক কর্মকার না হয়েও শ্রমিক দিয়ে পরিচালনা করছেন এ ব্যবসা। হাতুড়, বাটাল, আকর, কর্ণি, বাইশলাসহ দেশে চাহিদাসম্পন্ন অন্যান্য পণ্যগুলো তৈরি ও বাজারজাতে এগিয়ে রয়েছে সোনাতলার স্বপন কর্মকার, রবিন কর্মকার, বারীন কর্মকার, নিবারণ কর্মকার, মুকুল মোহন্ত, বাবলু, শফিকুল। মেড ইন বাংলাদেশ পণ্যের কারিগর রমানাথ কর্মকার জানান, ‘সোনাতলার হাতুড়, বাটাল, আকর, কর্ণি, বাইশলা গুণগত মানে দেশসেরা। দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এখানকার পণ্যগুলোর। কর্মকারদের সরকারি সহায়তা দিলে আরও উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। সোনাতলা উপজেলা সদরের বাসিন্দা প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন জানান, উপজেলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের কামারবাড়িতে তৈরি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নামে পণ্য বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করেছে। ব্যবহারকারীরা মনে করেন বাংলাদেশের এই পণ্য ঢাকা বা চট্টগ্রামে তৈরি হয়। অথচ এই পণ্য তৈরি করার পর তা সুন্দর মোড়ক করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়।

সর্বশেষ খবর