সোমবার, ১৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বোরোর বাম্পার ফলন

মোশাররফ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বোরোর বাম্পার ফলন

অনুকূল আবহাওয়ায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের সমারোহ। ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষান-কৃষানিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার নয় উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় সময় মতো ঘরে তুলছেন কৃষক। এই মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ হেক্টর বেশি। বিগত বছরের তুলনায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী জাতের যেমন ব্রি ধান ৮১, ৮৪, ৮৬, ৮৮, ৮৯, ৯২ ইত্যাদির আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকার হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার হাওরে প্রায় শতভাগসহ গড়ে শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই তাদের কাক্সিক্ষত সোনালি ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলে কৃষক আশা করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, করোনায় লকডাউনের মাঝেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৭ হাজার কৃষি শ্রমিক এ জেলায় ধান কাটতে এসেছেন। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, রংপুর ও হবিগঞ্জ থেকে আসা এসব কৃষি শ্রমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ জেলায় অবস্থান করে ধান কাটার কাজ করছেন। এ বছর শতকরা ৭০ ভাগ ভর্তুকিমূল্যে হাওরে এবং শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকিমূল্যে নন-হাওড়ে ৬৫টি কম্বাইন হার্ভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। পূর্বের ৪৫টি ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৪৬টিসহ মোট ১৫৬টি কম্বাইন হার্ভেস্টার এবং ২৮টি রিপার একযোগে জেলায় ধান কেটেছে। এ ছাড়াও লকডাউনে বেকার হয়ে পড়া অকৃষি শ্রমিকরা ধান কাটায় অংশ নেওয়ায় ফসল ঘরে তুলতে সহায়ক হয়েছে। বোরো ধানের এই বাম্পার ফলনে কৃষি বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দলীয় আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ব্লকে নিয়মিতভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ-সংক্রান্ত পূর্বাভাস জরিপ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এসব কাজ ছাড়াও জেলায় কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকের জমিতে ফসলের তদারকিসহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন। জেলার সদর উপজেলার রামলাইলের ধানচাষি মো. শামীম মিয়া জানান, এবার ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান খুব ভালো হয়েছে। প্রতিটি শীষ খেতে সোনার মতো জ্বলছে। বাজারে ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারব ইনশা আল্লাহ। সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ধানচাষি ছন্দু মিয়া ধানের বাম্পার ফলনে মহাখুশি। সোনালি ধানের ম-ম গন্ধে ভরে উঠছে তার বাড়ির উঠান। তিনি বলেন, ফলন ভালো হয়েছে এবার স্বপ্ন দেখছি ভালো দামের। 

আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া গ্রামের ধানচাষি হুমায়ুন মিয়া জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোকা মাকড়ের উপদ্রব ছাড়াই ধান ঘরে তুলতে পারছি। ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। ভালো দাম পেলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালো থাকতে পারব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. রবিউল আলম মজুমদার বলেন, করোনায় লকডাউনের ভিতরেও আমরা কৃষিপণ্য সরবরাহ, যথা সময়ে বীজ প্রদানসহ জরুরি সেবা চালু রাখার চেষ্টা করেছি। চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ কাজে আশুগঞ্জ-পলাশ এগ্রো ইরিগেশন প্রকল্পের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর সেচ সুবিধা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় সেচের পানি বিকল্প ব্যবস্থায় চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বোপরি অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি জানান, বেশি ফলন পাওয়ায় কৃষক এখন হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধানের আবাদ বেশি বেশি করছে। বাজারে ধানের দাম ভালো পেলে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ শতভাগ পূরণ হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর