বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মরিচের দামে হতাশ কৃষক

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

মরিচের দামে হতাশ কৃষক

গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত ফুলছড়ি উপজেলায় মরিচ চাষ বেশি হওয়ার কারণে এখানে জেলার একমাত্র মরিচের হাট বসে। গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন হাটে নৌকায় বিভিন্ন চর থেকে এসব মরিচ আসে। ‘ফুলছড়ি মরিচ হাট’ নামে পরিচিত এই হাট এখন শুকনো মরিচের আমদানিতে লালে লাল হয়ে উঠেছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় মরিচের দাম কম হওয়াতে এবার কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। হাটে গিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষক ও পাইকাররা মরিচ বিক্রি করতে আসেন জেলার একমাত্র এই মরিচের হাটে। আর বগুড়া জেলা থেকে মরিচ কিনতে আসেন ব্যাপারীরা। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুদিন সকাল ৭ টা থেকে হাট বসে। প্রতি হাটে দুই হাজার মণের বেশি মরিচ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান টোল আদায়কারীরা। গত বছর উপজেলা প্রশাসন এই হাট ৮৬ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছিলেন। তবে ১০ পার্সেন্ট হারে প্রতি বছর ইজারা মূল্য বৃদ্ধির মুখে এবার এই হাট কেউ ইজারা নেয়নি। উপজেলা প্রশাসন খাস আদায় করছে বলে জানান খাস আদায় কমিটির সদস্য গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলম সরকার। ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে মরিচ চাষে বিপ্লব ঘটে গেছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে জেলায় মোট ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির মধ্যে ফুলছড়ির চরেই মরিচ চাষ হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। ৪০ হাজার মেট্রিক টন মরিচ উৎপন্ন হয়েছে এবার। হাইব্রিড, বগুড়ার জাত ও স্থানীয় জাতের মরিচ চাষ করেছেন কৃষকরা। উপজেলার খাটিয়ামাড়ী চরের কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, বিঘা প্রতি কাঁচামরিচ উৎপাদনের খরচ পড়েছে ২৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৫০ মণের বেশি মরিচ উৎপন্ন হয়। ৫০ মণ কাঁচামরিচ শুকিয়ে ১০ মণ শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। মরিচ শুকানো, পরিবহন এবং বাজারজাত খরচ যুক্ত করে মণপ্রতি ব্যয় যা হচ্ছে তাতে খুব সামান্য লাভ টিকছে বলে জানান তিনি। গত বছর যেখানে শুকনা মরিচ ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এবার সে দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এবার মানভেদে মরিচের মণ চার হাজার টাকা থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  মরিচ বিক্রেতারা জানান, এই হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসেন হাজার খানেক কৃষক ও পাইকার। আর বগুড়ার প্রায় পঞ্চাশ জন ব্যাপারী আসেন মরিচ কিনতে । হাট বগুড়ার ব্যাপারীদের একচেটিয়া দখলে থাকায় তারাই দাম নির্ধারণ করেন। বগুড়া থেকে মরিচ কিনতে আসা ব্যাপারী জহুরুল মরিচের কম দাম বিষয়ে বলেন, করোনার কারণে ঢাকার গুঁড়া মসলা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো যেমন কম মরিচ কিনছে। তেমনি পরিবহন খরচও বেশি পড়ছে। এবার বৃষ্টি কম হবার কারণে মরিচের মানও ভালো না। তাই দাম কম। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচের চাষ হয় তার অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলায়। দিন দিন মরিচ চাষের পরিমাণ এখানে বাড়ছে। কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শসহ সবধরনের সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর