বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

দুধের গ্রাম ধাতুর পহেলা

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

দুধের গ্রাম ধাতুর পহেলা

কাকডাকা ভোরে জেগে ওঠেন নারী-পুরুষ। পুরুষের পাশাপাশি বউ-ঝিরাও ছুটে চলেন গোয়ালঘরের দিকে। গোয়ালঘরে রাখা গোবর সরিয়ে জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। এরপর একে একে শুরু হয় গাভী থেকে দুধ দোহানোর কাজ। এরপর সেই দুধ ভর্তি করা হয় ছোট-বড় সিলভারের কলসি ও বালতির মধ্যে। তারপর সেই কলস কিংবা বালতি নিয়ে বিক্রির জন্য ছুটে চলছেন স্থানীয় হাট-বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা গ্রামে। এই গ্রামের শতাধিক পরিবার গাভী পালন ও দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সরেজমিন ধাতুর পহেলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় খামারি ও গৃহস্থরা তাদের  গরু ও গাভীর পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাভী থেকে তারা সকাল-বিকাল দুই বেলা দুধ সংগ্রহ করছেন। এই গ্রাম থেকে স্থানীয় পাইকাররা এসে নিয়মিত দুধ ক্রয় করলেও পাশাপাশি গৃহস্থরা দুধ নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে বিক্রি করছেন। ওই গ্রামে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ লিটার দুধ স্থানীয় বাজার ও গ্রামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গাভী পালনে অধিক লাভ হওয়ায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গাভী পালনে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। এ গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে দুই থেকে পাঁচটি গাভী নেই। তাছাড়া কেউ কেউ খামার করে বাণিজ্যিকভাবে গাভী পালন করছেন। বর্তমানে এই গ্রামের বেশির ভাগ লোকের দুধ বেচাকেনাই একমাত্র পেশা। এ উপজেলার বেশির ভাগ মিষ্টির দোকানেও দুধের চাহিদা মেটানো হয় এ গ্রাম থেকেই। পাশাপাশি কালিনগর, তুলাবাড়ি, কুসুমবাড়ি গ্রামের লোকজনও এখন গাভী পালন করছেন। মিন্টু মিয়া বলেন, ৭ বছর আগে প্রায় ৩০ শতক জায়গার মধ্যে ফ্রিজিয়ান, নেপালিসহ উন্নত জাতের গরু দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৪১টি গরুর মধ্যে ১৬টি গাভী রয়েছে। দৈনিক ১২০ লিটারের ওপর দুধ সংগ্রহ করা হয়। যা স্থানীয় বাজার ও ব্যাপারীদের কাছে ৫০ টাকা দরে দৈনিক ৬ হাজার টাকার ওপর দুধ বিক্রি করা হয়। সব খরচ বাদে প্রতি মাসে দুধ বিক্রি করে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তার আয় হয় বলে জানান। গৃহিণী আলেয়া বেগম বলেন, ৫ বছর আগে একটি গাভী পালন দিয়ে শুরু করি। এখন তার দুটি গাভী হয়েছে। প্রতিদিন গাভী থেকে ৫ লিটারের বেশি দুধ বিক্রি করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে গ্রামে দুধ বিক্রি করে মাসে ৬ হাজার টাকার ওপর আয় তিনি আয় করছেন। এখন তার সংসারে কোনো অভাব নেই। নিজের ও সন্তানের পড়াশোনার খরচের বাড়তি চিন্তা করতে হয় না। আমিনুল ইসলাম বলেন, পড়াশোনা বেশি করতে না পাড়ায় বেকারত্ব দূর করতে গরু পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার একটি গরু ও চারটি গাভী রয়েছে। গাভী থেকে ১২-১৪ লিটার দুধ বিক্রি করে মাসে তার ১৫ হাজার টাকার ওপর আয় হয়। গৃহিণী  মনোয়ারা বলেন, অনেক কষ্ট করে ৬ বছর আগে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় একটি বাছুর কেনা হয়। ওই বাছুর লালন পালন করে এখন দুটি গাভীর মালিক। খড়, খৈল, ভূষির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দৈনিক প্রায় ৭০ টাকা ওপর খরচ হয়। দুধ বিক্রিতে প্রতি মাসে খরচ বাদে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা তার আয় হয়।

 গাভী পালনে তার আর্থিক অবস্থা ভালো হয়েছে। আখাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামাল বাশার বলেন, ধাতুর পহেলা গ্রামটি বর্তমানে একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ গ্রামে অনেক খামার রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর