বুধবার, ২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ রুটে চলবে ফেরি

স্বপ্ন বুনছে ১১ জেলার মানুষ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

স্বপ্ন বুনছে ১১ জেলার মানুষ

বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি ও জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ রুটে চলবে ফেরি। ফলে স্বপ্ন বুনছে ১১ জেলার মানুষ। যমুনা নদীর এই পথে যোগাযোগে নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এবার বগুড়া  হয়ে জামালপুর থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে দূরত্ব কমাতে  বগুড়ার সারিয়াকান্দির সঙ্গে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপনে ফেরি চালুর প্রক্রিয়া অবশেষে শুরু হওয়ায় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে মানুষ। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীতে ফেরিঘাট স্থাপন হলে উত্তরের মানুষের সঙ্গে আবারও বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার যোগাযোগ স্থাপন হবে। বগুড়া থেকে ঢাকার সঙ্গে এই পথে চলাচলে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। পাশাপাশি নতুন করে প্রসার হবে কৃষি পণ্যের  সরবরাহ, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার এবং সড়ক মহাসড়কে যানজট কমে আসবে। ফেরিঘাট স্থাপনের  বাস্তবায়ন চেয়েছে যমুনা নদীর দুই পাড়ের মানুষ। জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌপথে ফেরি চালুর জন্য ফেরিঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্যতা ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নকাজে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভ্যাবতা যাচাইয়ে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল গত ২৬ মে সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল ফেরি চালুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন আইডব্লিউএমের পরামর্শক মহিউদ্দীন পাটোয়ারি। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব কমাতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ হয়ে যমুনা নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা চলছে। প্রথমে বাহাদুরাবাদ-গাইবান্ধার বালাসি নৌপথে ফেরি চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। পরে সেই পরিকল্পনা আর এগোয়নি। এখন নতুন করে মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দি ১৬ কিলোমিটার নৌপথে ফেরি চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, যমুনা নদী প্রবাহিত হওয়ার দিন থেকেই বৃহত্তর ময়মনসিংহকে বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলাকে বিভক্ত করেছে। যমুনা নদীর পূর্বে ময়মনসিংহের জামালপুর আর পশ্চিমে বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলা। ১৬ জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ হয়ে ১১টি জেলার মানুষ সরাসরি চলাচল করত। ১৯৯০ সালে চালুর পর গাইবান্ধার বাহাদুরাবাদ-বালাসি রুট বন্ধ হয়ে যায় ২০০৪ সালে। প্রায় ১৭ বছর ধরে ফেরি চলাচল বন্ধের পর বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগও কমে যায়।

নাব্য বেশি থাকার কারণে পরে বাহাদুরাবাদ-বালাসি রুট সরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি হয়ে জামালারপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় খেয়া নৌকার মাঝিরা নতুন করে রুট তৈরি করে। এই পথে খেয়া নৌপথ চালু থাকলেও সে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ঝুঁকি নিয়েই উত্তরবঙ্গের লোকজনও সারিয়াকান্দির কালিতলা বা মথুরাপাড়া ঘাট থেকে খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হয়ে ওপারের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছেন। এ পথে চলাচলে নৌকাভাড়া জনপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কালিতলা ঘাট থেকে মাদারগঞ্জ যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। ফেরিঘাট বন্ধ হওয়ার আগে সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হলে এ পথেই চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু সড়ক পথে চলতে গিয়ে সাধারণ মানুষ নানা দুর্ভোগে পড়ে। সেতুতে টোল, সেতু এলাকায় যানজট, অতিরিক্ত ৮০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে গিয়ে সব কিছুরই অতিরিক্ত অপচয় হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আইডব্লিউএম এর প্রতিনিধি দল আসায় যমুনা নদীর দুই পাড়ের মানুষের মনে স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। নৌপথের যাত্রীরা বলছেন, ওপারের জামালপুরের মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও কাজলা ঘাট থেকে এপারের বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ও মথুরাপাড়া নৌঘাটে খেয়া নৌকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার মানুষ চলাচল করছে। মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দির নৌপথই উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। এই বাস্তবতায় এই নৌপথে দীর্ঘদিন ধরে ফেরি চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।

সর্বশেষ খবর