বুধবার, ৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে চৌহালী

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

হারিয়ে যাচ্ছে চৌহালী

উপজেলা পরিষদ ভবন, থানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্যাংক-বীমা অফিসসহ বিগত নয় বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এমন অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা। ধীরে ধীর বিলীন হয়েছে কয়েক শতাধিক গ্রাম। পাকা সড়ক, সেতু কালভার্টসহ নানা স্থাপনা ও জনপদ। বর্তমানেও ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ফসলি জমি। করালগ্রাসী যমুনা নদীর ভাঙনে চৌহালী উপজেলা সিরাজগঞ্জের মানচিত্র থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে এক সময় চৌহালী উপজেলা শুধু কাগজে-কলমে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। জানা যায়, যমুনা নদীর দুপাড়ে সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে চৌহালী উপজেলা গঠিত। এর মধ্যে পশ্চিমপাড়ে একটি ইউনিয়ন সদিয়াচাঁদপুর এবং মধ্য যমুনায় স্থল ও উমারপুর ইউনিয়ন। পূর্বপাড়ে চারটি ইউনিয়ন। আয়তন ৮০ বর্গমাইল। মধ্য যমুনায় স্থল ও উমারপুর ইউনিয়নের মানুষের জীবন ভাঙাগড়ার খেলায় চলছে। বিগত ৯ বছরের মধ্যে পূর্বপাড়ের চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। খাসকাউলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত উপজেলা পরিষদ ভবন, আবাসিক কোয়ার্টার, থানা ভবন, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স, সোনালী ব্যাংক, কৃষি অফিসসহ সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাড়াটিয়া রুম ভাড়া নিয়ে এসব অফিসের কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে পূর্বপাড়ের চারটি ইউনিয়নেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বসতবাড়ির জায়গা না থাকায় হাজার হাজার পরিবার পার্শ্ববর্তী জেলা টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন। ভোটাধিকার চৌহালী থাকলেও বসতবাড়ি অন্য উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে। নামে চৌহালী উপজেলার সংখ্যা ২ লক্ষাধিক থাকলেও বাস্তবে এর অর্ধেকেরও চৌহালী উপজেলায় বসবাস নেই। নদীভাঙনের কারণে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম চরম ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনের কবলে পড়ায় অঙ্কুরেই অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়ে গেছে। শিশুরা এখন চরের খেত-খামার ও মাছ ধরার কাজ করছে। নদীভাঙনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে। মানুষ ওয়াপদাবাঁধে ঝুপড়ি তুলে রোগ-শোক মাথায় নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো দিনমজুরের কাজ করে জীবন চালাচ্ছে। দুঃখ-কষ্ট তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। রাস্তাঘাট না থাকায় চলাচলেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতো কষ্টের মাঝেও যেটুকু জায়গা এখনো রয়েছে সে জায়গা আকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তারা। গত কয়েকদিনে জেলার চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া, খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের রেহাইপুখুরিয়া, চরনাকালিয়া, চরবিনানই, চরসলিমাবাদ, মিটুয়ানি, খাসপুখুরিয়া গ্রামে তীব্র নদী ভাঙন চলছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

 জায়গা না থাকায়  ভাঙনকবলিত মানুষ অনেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষ  ছেলেমেয়ে  নিয়ে একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে  মিটুয়ানি হাইস্কুল, প্রাইমারি, বাজার, মসজিদ ও হাজার হাজার বসতভিটা। স্থানীয় বাসিন্দা সালমা মাস্টার জানান, নদীভাঙনে ইতিমধ্যে চৌহালীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেটুকু বাকি রয়েছে তা যদি ভেঙে যায় তবে চৌহালী উপজেলা শুধু মানচিত্রেই থাকবে। বাস্তবে তা নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। চৌহালীর বাসিন্দার প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন অন্য উপজেলায় বসবাস করছে। বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাহ্হার সিদ্দিকী জানান, দ্রুত যদি  ভাঙন রোধে কাজ না করা হয় তাহলে বর্ষা মৌসুমেই বাঘুটিয়া ইউনিয়নের যেটুকু অংশ রয়েছে তার সবটুকুই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তখন কাগজে-কলমে বাঘুটিয়া ইউনিয়ন থাকবে, বাস্তবে নয়।  চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা ইয়াসমিন আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, প্রতি বছর ১২-১২টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। ভাঙনরোধের জন্য প্রতি বছর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর