বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

এক জমিতে সাত ফসলের হাসি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

এক জমিতে সাত ফসলের হাসি

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের মাঠ। গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস ভূঁইয়া ৬০ বিঘা জমিতে কুল, সিডলেস লেবু, কলা, পেঁপে, মাল্টা, আম ও সবজির চাষ করেছেন। এ ছাড়া জমির পাশের নালায় মাছ চাষ করেছেন। মৃদু হাওয়ায় দুলছে কৃষকের ফসলের মাঠ। মো. ইউনুস ভূঁইয়া জানান, তিনি ১৪ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত্বাবধান করেছেন। কয়েক বছর আগে দেশে আসেন। নিজের এবং অন্যের জমি লিজ নিয়ে ৬০ বিঘা জমিতে মাছের খামার করেন। এলাকা উঁচু হওয়ায় পানি কমে যায়। তেমন লাভও পাচ্ছিলেন না। চিন্তা করলেন খামারের পাড়ে ও ভিতরের জমিতে লেবুর চারা লাগাবেন। টাঙ্গাইল থেকে সাত হাজার লেবুর চারা এনে লাগিয়েছেন। সঙ্গে আর কি করা যায় সেই ভাবনায় ইউটিউবে দেখলেন বল সুন্দরী কুলের চাষ। চারা আনলেন নাটোর থেকে। আট মাসে কুলের ফল আসা শুরু করেছে। তিনি প্রথম বছর দুই লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, প্রথম বছর প্রতি গাছে ১০-১২ কেজি কুল পাওয়া যায়। আগামী বছর প্রতি গাছে ১২০-১৩০ কেজি কুল আসবে। এই গাছ থেকে ১০-১২ বছর ফল আসবে। সামনের মাসে লেবু তোলা যাবে। রয়েছে মাল্টার বাগান। সঙ্গে বেগুন, ডাঁটাসহ অন্যান্য সবজির চাষ করেছেন। তার দাবি, তিনি ৫০ লাখ টাকার পুঁজি লাগিয়েছেন। ২০ লাখ টাকা পুঁজি পেলে ভালো ফসল তুলতে পারবেন। তার আশা আগামী বছর তিনি দেড় কোটি টাকার ফসল বিক্রি করতে পারবেন।

 বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ধানের মাঠের মাঝে একটি বড় পুকুর। পুকুরের শুকনো জমি জুড়ে কুল, লেবু, কলা, পেঁপে ও মাল্টা বাগান। দক্ষিণের হাওয়ায় দুলছে বল সুন্দরী কুল ও লেবু গাছ। মাঠের স্নিগ্ধ রূপে মুগ্ধ চাষি মো. ইউনুস ভূঁইয়া। তিনি গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করছেন, সঙ্গে আছেন কয়েকজন শ্রমিক। জমির যে অংশ থেকে মাটি তুলে পুকুরের পাড় বাঁধা হয়েছে, সেখানে খালের মতো পানি জমেছে। খালের পানি সেচ দেওয়া ও খালে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে। খালে মাছ চাষ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া জমির ফসল চুরি ও ক্ষতি ঠেকাবে খাল। মো. ইউনুস ভূঁইয়ার প্রতিবেশী উপজেলা কৃষক লীগের আহ্‌বায়ক কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, একজন ব্যতিক্রমী ও সাহসী কৃষক তিনি। সহজ শর্তে ঋণ পেলে মো. ইউনুস ভূঁইয়া আরও ভালো করতে পারবেন। মানুষ বিষমুক্ত নিরাপদ ফল ও সবজি পাবে। মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই এলাকায় মো. ইউনুস ভূঁইয়ার খামার সবচেয়ে বড়। তাকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। জৈবসার ব্যবহার করে যেন ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারে সে জন্য তাকে প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা দিয়েছি। তার ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর