বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্রামীণ নারীদের তৈরি হেয়ার ক্যাপ যাচ্ছে চীনে

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

গ্রামীণ নারীদের তৈরি হেয়ার ক্যাপ যাচ্ছে চীনে

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ছেঁটে ফেলা চুল দিয়ে ঘরে বসেই হেয়ার ক্যাপ তৈরি করছেন দরিদ্র নারী ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তৈরি করা এসব হেয়ার ক্যাপ চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এসব ক্যাপ তৈরি করে প্রতিমাসে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এলাকার শত শত বেকার শিক্ষিত নারীরা খুঁজে পাচ্ছেন বাড়তি আয়সহ নতুন কর্মসংস্থান। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ কাজে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন উপজেলার ধারা ইউনিয়নের টিকুরিয়া গ্রামের এক নারী। তিনি পার্শ¦বর্তী উপজেলা ফুলপুরে বিয়ের সুবাদে স্বামীর উৎসাহে এ কাজে যোগ দেয়। পরিচয় ঘটে ক্রেতা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। কাজের আগ্রহ দেখে ক্রেতা সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসেন। বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। এরপর ওই নারীকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বামীর বাড়িতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাবার পরিত্যক্ত ভিটায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেন হেয়ার ক্যাপ তৈরি কারখানা। সেখানে স্থানীয় নারীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় চুল, সুই-সুতাসহ হেয়ার ক্যাপ তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম। এখন তার কারখানায় নিয়মিতভাবে ৬০ জন নারী কাজ করছেন। করোনা পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি  মেনে পুরোদমে চলছে হেয়ার ক্যাপ তৈরি।  বর্তমানে গ্রামের অনেক শিক্ষিত ও বেকার নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছে এ কাজ করতে। স্থানীয়রা জানালেন, এখানে এমন একটি কারখানা হাওয়ায় আমাদের গ্রামের অনেক গরিব পরিবারের মেয়েরা এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এমনকি যারা লেখাপড়া করে তারাও এখানে কাজ করে তাদের  লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তা রত্না আক্তার ফাতেমা জানান, গ্রামের হত দরিদ্র নারীরা নিজেদের সংসারের কাজের ফাঁকে এ কাজ করে আমার কাছে সরবরাহ করে। ক্যাপ তৈরির জন্য চুল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আমাকে ঢাকা থেকেই সরবরাহ করা হয়।

প্রতিমাসে রকমভেদে তৈরি করা প্রায় ৩ শতাধিক টুপি সরবরাহ করেন। বাজার মূল্য ৪ লাখ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তাদের তৈরি করা হেয়ার ক্যাপ ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে থাকেন। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমার ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় করা সম্ভব হতো। কথা হয় কাজ করতে আসা মাতুফা বেগমের সঙ্গে তিনি জানান, দেশের করোনা পরিস্থিতি মধ্যে আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ ঢাকায় একটি  তৈরি পোশাক-কারখানায় কাজ করতাম। গত লকডাউনে আমার চাকরি চলে যায়। অনেক ঋণের  বোঝা মাথায় গ্রামের বাড়িতে চলে আসি কি করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এক সময় আমাদের গ্রামেরই এই হেয়ার ক্যাপ কারখানায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ  শেষে এখন এখানেই কাজ করছি। স্কুল শিক্ষার্থী সাদিয়া ও আয়শা জানান, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তিনমাস ধরে এ কাজের সঙ্গে যুুক্ত আছি। চুল দিয়ে একটি ক্যাপ তৈরি করতে পারলে আমরা ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত পাই। একটি ক্যাপ তৈরি করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। আমাদের আয়ের টাকা দিয়ে আমাদের নিজেদের খরচ চলে যায়। হালুয়াঘাট উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা গোলে জান্নাত সেতু জানান, আমাদের কার্যালয় থেকে ৩ মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ ও বিউটি পার্লারের কাজ শেখানো হয়। এ কাজের নিয়োজিত নারীরা যদি এ ধরনের প্রশিক্ষণে আসতে চাই তাহলে তাদের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ইউএনও মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিন কে বলেন,  নিঃসন্দেহে ভালো একটি উদ্যোগ। এ ধরনের কাজে নিয়োজিত হয়ে একদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে ও অর্থনীতির চাকাও সচল হচ্ছে। অন্যান্যরাও যেন অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসেন।

সর্বশেষ খবর