বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

খানা-খন্দের লাহিনী সান্দিয়ারা সড়ক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

খানা-খন্দের লাহিনী সান্দিয়ারা সড়ক

দুই-এক হাত পরপরই বড় বড় গর্ত। ইটের রঙের মতো লালচে ধুলা ছড়িয়ে রয়েছে সড়কজুড়ে। যানবাহন গেলেই ধুলায় সব অন্ধকার করে দিয়ে যায়। সড়কের পিচ বলতে গেলে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। দেখে আর বোঝার উপায় নেই যে, এক সময় এখানে পিচঢালা পাকা রাস্তা ছিল। এই করুণ অবস্থা জেলার কুমারখালী উপজেলার লাহিনী-সান্দিয়ারা সড়কের। প্রায় ১৬ কিলোমিটার এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে জনদুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বছর চারেক ধরেই সড়কের এ বেহাল অবস্থা। খানাখন্দে ভরা বেহাল এই সড়কটি এখন কুমারখালী উপজেলাবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কের খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে জনদুর্ভোগ যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লাহিনী থেকে সান্দিয়ারা সড়কটি জিকে খালের ওপর দিয়ে সান্দিয়ারা পেরিয়ে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার লাঙ্গলবন্ধ গিয়ে মিশেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই সড়কটি বিপুল জনগোষ্ঠীর যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা, চাপড়া, চাঁদপুর, পান্টি ও বাগুলাট ইউনিয়ন, খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়ন, ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার কিছু অংশ এবং মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ১০-১২ লাখ মানুষ যাতায়াতের জন্য এই সড়কের ওপর নির্ভরশীল। কুষ্টিয়া এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রহমান মন্ডল জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে লাহিনী থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়কটি পুনঃনির্মাণের জন্য ২০১৯ সালে দরপত্র আহ্‌বান করা হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহযোগিতায় সড়ক নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। টেন্ডারে অংশ নিয়ে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজটি পায়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারা সড়কের কাজও শুরু করে। ২০২১ সালের ৩১ মে’র মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল।  ঠিকাদারি ওই প্রতিষ্ঠানটি আর কাজ না করায় ২০২০ সালের শেষের দিকে এসে ওই কার্যাদেশ বাতিল ঘোষণা করা হয়। পুনরায়        দরপত্র আহ্‌বান করার জন্য অনুমোদন চেয়ে এডিবি’র কাছে আবেদন করা হয়। সামান্য যে কাজ উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করেছে তা মাপ-জোক করে বিল বুঝে নেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা এতে কর্ণপাত করছে না। শর্তানুযায়ী উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টি বাতিল করা হয়েছে।

এ অবস্থায় তারা ঢাকা জজ কোর্টে এলজিইডি’র বিরুদ্ধে আরবিটিশন মামলা করেছে। নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রহমান মন্ডল বলছেন, মামলা কোনো ইস্যু নয়; এডিবি’র অনুমোদন পাওয়া গেলেই আমরা পুনরায় দরপত্র আহ্‌বান করতে পারতাম। কিন্তু এখনো অনুমোদন না মেলায় তারা সড়কটি পুনঃনির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্‌বান করতে পারছেন না। স্থানীয়রা জানান, জায়গায় জায়গায় ছোট-বড় খানা-খন্দে পরিণত সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ-জন আহত হচ্ছেন। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মালামাল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার লাহিনী প্রান্ত থেকে কিছুদূর এগুলোই সড়কের আর পিচ চোখে পড়বে না। জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত। ইটের রঙের মতো লালচে ধুলো ছড়িয়ে আছে সড়ক জুড়ে। যানবাহন গেলেই ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের উত্তরের পাড়ের ওপর দিয়ে গেছে সড়কটি। খাল দিয়ে বয়ে যাচ্ছে টলমলে পানি। চারিধারে সবুজ ফসলের খেত। খালের পাড় জুড়ে বড় বড় বৃক্ষরাজি। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা জানান, এ সড়ক দিয়ে চলতে গেলে বারবার গাড়ির পাতি ভেঙে যায়। টাকা লোকসান হয়, কষ্টও হয়। পড়ে গিয়ে যাত্রীরা আহত হন। এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে মানুষের ভোগান্তি বিবেচনায় ভ্রাম্যমাণ রক্ষণাবেক্ষণ ফান্ড থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের বড় বড় গর্তগুলো  মেরামতের কাজ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর