বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ঠাকুরগাঁওয়ে আমের বাজারে করোনার প্রভাব

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে আমের বাজারে করোনার প্রভাব

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গ্রামের ছোট হাটগুলোতে সূর্যাপুরী পাকা আম বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা কেজি দরে। আর কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা কেজি দরে। করোনার প্রভাবে বাজারে ক্রেতার আগমন না হওয়া এবং অন্য জেলা থেকে আম ক্রয়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারের এমন বিপর্যয় ঘটেছে বলে স্থানীয় আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার লাহিড়ী, খোচাবাড়ী, স্কুলহাট, কুশলডাঙ্গী, বাদামবাড়ী, হলদিবাড়ী, কালমেঘসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে আমের ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে বসে থাকলেও বাজারে ক্রেতা নেই। দু-একজন ক্রেতা থাকলেও তারা স্থানীয়। বহিরাগত ক্রেতা নেই বললেই চলে। বাজারে সূর্যাপুরী আম প্রতিমণ কাঁচা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আম্রপালি ৭০০ টাকা, হিমসাগর ১ হাজার ৪০০ টাকা, লখনা আমের প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, ল্যাংড়া আমের প্রতিমণ ৬০০ টাকায়। কাঁচা আমের তুলনায় পাকা আমের মূল্য অর্ধেকের চেয়ে আরও কম।  গত বছর বাজারে সূর্যাপুরী আম ৫০-১০০ টাকা কেজি, আম্রপালি ৭০-১০০ টাকা কেজি, হাঁড়িভাটা ৮০-১৫০ টাকা, ল্যাংড়া ৯০-১৫০ টাকা, হিমসাগর ৮০-১৫০ টাকা, আশ্বিনা ৫০-১৫০ টাকা এবং বাড়ি-৪ আম ১০০-২৫০ টাকা কেজি দরে প্রতি বছর বিক্রি হয়েছিল।

গতকাল দুপুরে কুশলডাঙ্গী বাজারে ছিদ্দিকা বেগম দুই কেজি সূর্যাপুরী আম কিনেছেন ১৪ টাকা দিয়ে। তিনি জানান, গত বছর এই আম শুরুতেই ৫০ টাকা কেজি দরে কিনে খেতে হয়েছিল। এ বছর অনেক সস্তা।  ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে আম কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম রবিবার সকালে বালিয়াডাঙ্গী বাজার থেকে ৪ মণ আম কিনেছেন ৩ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে। তিনি জানান, আমের দাম কম শুনে ঠাকুরগাঁও থেকে সকালেই এসেছি আম কিনতে। ভালো মানের আম কিনলাম। বালিয়াডাঙ্গী বাজারের আম ব্যবসায়ী হারুন জানান, বাজারে আমের ক্রেতাও নেই, দামও নেই। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাইরে থেকেও আম কিনতে কেউ আসেনি। বিক্রি না হওয়ার কারণে পাকা আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবদুল্লাহ নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, আমের বাজার সাধারণত শুরু হয় বিকাল ৪টার পর। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য কয়েকদিন ধরে এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। ৫টার পর সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। ১ ঘণ্টায় আর কত আম বিক্রি করবেন। দুওসুও ইউনিয়নের আলোকছিপি গ্রামের আম্রপালি আমবাগান মালিক রেজওয়ানুল কবির জানান, গত বছর ফলন কম হলেও দাম ছিল। আম বিক্রি করে বাগান দেখাশোনা ও পরিচর্যার খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে আম ব্যবসায়ীদের চরম লোকসান গুনতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ৪৩১ হেক্টর জমিতে সূর্যাপুর, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আশ্বিনা, বাড়ি-৪সহ বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সূর্যাপুরী ও আম্রপালি আমের বাগান বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গত ৩ বছর ধরে আম বিক্রি করছেন এস এম মনিরুজ্জামান নামে শিক্ষার্থী। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে তেমন সাড়া নেই। দাম কম হলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২০ মণ আমের অর্ডার পায়নি। গত বছর প্রায় ২০০ মণ আম বিক্রি করেছি অনলাইন প্ল্যাটফরমে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে জনস্বার্থে। আম বিক্রিতে অনলাইন প্ল্যাটফরম এখন বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া ছাড়া এই মুহুর্তে কোনো কিছু বলার নেই। যদি তারা কারিগরি সহায়তা চান, আমাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হবে।

সর্বশেষ খবর