সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রান্তিক তাঁতিদের দেওয়া শুল্কমুক্ত কাঁচামাল হরিলুট

পাবনা প্রতিনিধি

করোনায় লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ঋণ ও ধারদেনা নিয়ে বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন পাবনার প্রান্তিক তাঁতিরা। তাদের এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা হিসেবে বিভিন্ন সময় প্রণোদনা, ঋণ সহায়তা ও শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। তাঁতিদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের বঞ্চিত করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সব সহায়তা লুটপাট করে চলেছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। সম্প্রতি এমনই এক সিন্ডিকেটের খোঁজ মিলেছে পাবনার গয়েশপুরে। জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার সুতা, সোডিয়াম সালফাইডসহ বিভিন্ন কাঁচামাল শুল্কমুক্ত আমদানির অনুমতি পায় গয়েশপুর ২ নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতি। প্রান্তিক তাঁতিদের নামে এ কাঁচামাল আমদানি হলেও তারা কিছুই জানতে পারেননি। আমদানি-রপ্তানি বিভাগের অফিস আদেশ থেকে জানা গেছে, চারটি শর্তে তাঁতি সমিতিকে শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা             দেওয়া হয়েছে। প্রধান শর্ত হলো শুল্কমুক্ত এ কাঁচামাল সমিতির তাঁতে ব্যবহার করতে হবে। বিক্রি বা হাতবদল করা যাবে না।

কিন্তু দালাল চক্র গয়েশপুর ২ নম্বর প্রাথমিক তাঁত সমিতির সভাপতি নূর ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম এ সব কাঁচামাল আমদানি করে তা অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছেন।

এতে সমিতির ১৩০ জন প্রান্তিক তাঁতি বঞ্চিত হয়েছেন। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশের ৫১টি তাঁতি সমিতির নামে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কাঁচামাল এলসির মাধ্যমে আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। প্রায় ৪৫ কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি করা হয় পাবনার পাঁচটি প্রাথমিক তাঁতি সমিতির নামে। তবে সেখানকার প্রান্তিক তাঁতিরা এর কোনো সুবিধা পাননি। গয়েশপুর ২ নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁত সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তবে উত্তোলিত শুল্কমুক্ত কাঁচামাল কি করেছেন জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনায় শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করেছে গয়েশপুর ২ নম্বর ওয়ার্ড, গয়েশপুর ৩ নম্বর প্রাথমিক তাঁতি সমিতি, আতাইকুলা ৬ নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতি, দোগাছি ৩ নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতি ও একদন্ত ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতি। পাঁচটির মধ্যে তিনটি সমিতিতে আমদানি করা শুল্কমুক্ত কাঁচামালের কিছুই পাননি তাঁতিরা। সব কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা নিয়ে তাঁতিদের বঞ্চিত করায় পাবনায় ভুক্তভোগীরা তাঁত বোর্ডে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডেও জেনারেল ম্যানেজার কামনাশীষ দাস। তিনি বলেন, ‘তাঁতিদের জন্য সরকারের শুল্কমুক্ত সুবিধা হরিলুট হওয়ায় তাঁত বোর্ড ইতিমধ্যে শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। সরাসরি তাঁতিদের কাছে সরকারি সহায়তা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।’

 

সর্বশেষ খবর